মো. দাউদ মিয়া

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল অর্থনীতির উত্তরণকাল অতিক্রম করছে। সফলতার সাথে উত্তরণকালের সমাপ্তিতে বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হবে। এ জন্য বাংলাদেশকে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতা করতে হবে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরাশক্তিসহ অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহের সাথে। এ সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য শিল্পসম্পদের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের প্রসার ও সুরক্ষায় এখন থেকেই আমাদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে জানা যায়, ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের জব মার্কেটের শতকরা ২৭.৭ ভাগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মেধাস্বত্বভিত্তিক সম্পদ বা (Intellectual Property) IP-এর সাথে জড়িত। সম্প্রতি বছরগুলোতে US GDP তে এ খাতের অবদান প্রায় ৩৮ ভাগ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে IP Sector-এর অবদান উল্লেখ করার মতো নয়। অথচ বাংলাদেশের মেধাসম্পদের সাংস্কৃতিক শাখা খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত। এ খাতের বিকাশের জন্য প্রয়োজন মেধাসম্পদের সুরক্ষাসহ এর ব্যবহারজনিত অর্থনৈতিক অর্জনসমূহের যথাযথ হিস্যাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ। হিস্যার আভিধানিক অর্থ পাওনা। মেধাবৃত্তিক সম্পত্তি হতে পাওনা দুই প্রকার- (ক) নৈতিক পাওনা এবং (খ) অর্থনৈতিক পাওনা। পাওনা কথাটা শ্রুতিকটু মনে হতে পারে, তাই পাওনার পরিবর্তে অধিকার বা Right বললে জুতসই হবে বৈ কী। তাহলে দেখা যাক নৈতিক অধিকার বা Moral Right কী? প্রণেতা সৃজনশীল কর্ম প্রণয়ন করেন কেবল অর্থ উপার্জন করার জন্যই নয়। তার কর্ম যুগ-যুগান্তরে মানুষের সাংস্কৃতিক বা জাগতিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হওয়ার মাধ্যমে ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা সমাজের মণিকোঠায় স্থান পাবে- এমন গভীর স্বপ্ন প্রণেতা হৃদয়ে লালন করে। প্রণেতা চায় তার কর্মের মাঝে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে। প্রণেতা কখনো বিস্মৃত হতে চায় না।

“চাঁদেরে কে চায় জ্যোৎস্না সবাই যাচে

গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধূলি মাঝে।”

আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বোধ করি এ সুন্দর রূপকের মাধ্যমে পরিচিতি প্রকাশের অধিকার আদায়ের জন্যই উক্তরূপ আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। এই গানে কবি তাঁর পরিবর্তে তাঁর গানকে ভালোবাসতে বলেছেন। কিন্তু তাই বলে গানের মাধ্যমে নিজে সকলের মনে বেঁচে থাকতে চাননি তা নয়। অন্য এক জায়গায় তিনি বলেছেন,

“আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দিব না ভুলিতে”।

শুধু কাজী নজরুল ইসলাম নহেন সকল সৃজনশীল মানুষই তাঁর প্রতিটা কর্মের মাঝে বেঁচে থাকতে চায় এবং তাঁর কর্মের স্বীকৃতি অন্যকে দিতে চায় না। তাই বার্ণ কনভেনশনে কোনো সৃজনশীল কর্মের উপস্থাপন বা সম্পাদনের সময় প্রণেতার পরিচিতি অবিকৃতভাবে উল্লেখ করার বিধান রাখা হয়েছে যা হলো প্রণেতার নৈতিক অধিকার বা Moral Right.

মেধাস্বত্বের অন্য যে অধিকারটি নিয়ে বর্তমান ডিজিটাল যুগে হইচই শুরু হয়েছে তা হলো- অর্থনৈতিক অধিকার। প্রণেতা তার কর্মের নৈতিক অধিকারের পাশাপাশি তার সৃজনশীল কর্মের আর্থিক বিনিময়ও চায়। প্রণেতা তার সৃজনশীল কর্মের ব্যবহার এবং পুনরুৎপাদনের প্রথম অধিকার সংরক্ষণ করে। এই অধিকার তিনি নিজে ভোগ করতে পারেন কিংবা রয়্যালটি বা এককালীন অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর করতে পারেন যা হলো তার সৃজনশীল কর্মের অর্থনৈতিক অধিকার।

মেধাসম্পদের যে অংশটুকু শিল্প উদ্ভাবন তার অর্থনৈতিক ব্যবহার ব্যাপক এবং পুরোনো হলেও সাংস্কৃতিক ধারার মেধাসম্পদের অর্থনৈতিক ব্যবহার একমাত্র প্রকাশনা ছাড়া অন্য কোনো কর্মের মধ্যে তেমন ছিল না। প্রকাশক কবি/লেখকের লেখা প্রকাশ করে পাঠকের কাছে বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিক হিস্যা কবি বা লেখককে পৌঁছে দিত। এর বাইরে চলচ্চিত্র প্রযোজক তার চলচ্চিত্র হলে প্রদর্শনের মাধ্যমে বা ভিডিও ক্যাসেট বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করত। কিন্তু এখন সাংস্কৃতিক কর্মসমূহ ব্যবহারের যে বহুবিধ মাধ্যম তৈরি হয়েছে তাতে সাংস্কৃতিক ধারার মেধাসম্পদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পূর্বের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিককালের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম- ইউটিউব, ফেসবুকসহ ডিজিটাল প্রবাহ সেবা নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই এবং বিভিন্ন ওটিটি, টেলিকম ও স্যাটেলাইট চ্যানেলে সাংস্কৃতিক মেধাসম্পদের ব্যবহার বহুমাত্রিক। এই বহুমাত্রিকতার কারণে এসমস্ত সৃজনশীল কর্মের প্রকৃত স্বত্বাধিকারীর অর্থনৈতিক অধিকারের সুরক্ষা প্রদান পূর্বের তুলনায় খুবই জটিল। এজন্য প্রয়োজন পড়ছে এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও আইনি কাঠামোর আধুনিকীকরণ।

আধুনিক কপিরাইটের নৈতিক স্বীকৃতি এবং অর্থনৈতিক অধিকারের বর্তমান কাঠামো প্রাচীন গ্রীক, রোমান এবং জিউইশ সংস্কৃতি (Jewish Culture) হতে ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলে আসা বিকশিত রূপ। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬ শতাব্দী পূর্বেও কপিরাইটের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু টাইপ প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কৃত হওয়ার আগে প্রাচীন কপিরাইটের অর্থনৈতিক ব্যবহার ছিল না। নৈতিক অধিকারের মধ্যেই কপিরাইটের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। পুস্তক মুদ্রণের জন্য প্রথম টাইপ প্রিন্টিংয়ের ব্যবহার শুরু হয় চীন দেশে ১০৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে, যার আবিষ্কারক ছিলেন Bi Sheng (৯৯০-১০৫১)।

পরবর্তীকালে জার্মানিতে তৈরি হয় গুটেনবার্গ প্রেস যেখানে প্রতি ঘণ্টায় ২৪০ পৃষ্ঠা ছাপানো যেতো। ইউরোপিয়ান সমাজে এ ধরনের প্রেস দ্রুত প্রসার লাভ করে। ১৪৫৭ সালে সারা ইউরোপে এ ধরনের ১টি প্রেস ছিল যা ১৪৮০ সালে ১১০টিতে বৃদ্ধি পায়। প্রকাশনা খরচ কম হওয়ায় সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে সাহিত্য চর্চা এবং সাহিত্য প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে কিছু বিপত্তিও দেখা দেয়। প্রকাশনাসমূহের যথেচ্ছভাবে বাজারজাতকরণে প্রকৃত প্রণেতা এবং প্রকাশকদের বাণিজ্যিক স্বত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তখন থেকে ইউরোপে সরকারিভাবে প্রিন্টিংয়ের ওপর লাইসেন্সিং পদ্ধতি শুরু হয় এবং এক একটি প্রেসকে এক একটি প্রকাশনা কাজের জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হয়। ইংল্যান্ডে ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে রাজা সপ্তম হেনরী প্রিন্টিং অধিকারের ওপর একটি আইন প্রণয়ন করেন যেখানে স্টেশনারি কোম্পানিকে প্রকাশনার নিবন্ধনসহ অবৈধ প্রকাশনার জন্য জরিমানা করা এবং বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে উক্ত আইনের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যে The Licensing of the Press Act ১৬৬২ প্রবর্তিত হয়। প্রাথমিকভাবে কেবল সাহিত্যকর্ম সুরক্ষার জন্য বিশেষাধিকার বা কপিরাইটের প্রবর্তন হলেও কালক্রমে কপিরাইট সংক্রান্ত আইন শিল্পকর্ম, সংগীত, শব্দ-রেকর্ডিং, নকশা, ফটোগ্রাফ নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়।

১৭০৯ সালে ইংল্যান্ডে এ ব্যবস্থার পরিপূরক হিসাবে স্ট্যাটিউট অব অ্যান (Statute of Anne) নামে একটি বিধিবদ্ধ আইন প্রণয়ন করা হয়। অতঃপর ১৭৭৫ সালে নতুন একটি আইন পাস করে স্ট্যাটিউট অব অ্যান নামক আইনটি বাতিল করা হয়। পর্যায়ক্রমে ১৭৭৫ সালের আইনটি বাতিল করে ১৮৪২ সালে এবং ১৮৪২ সালের আইনটি বাতিল করে ১৯১১ সালে আইন প্রণয়ন করা হয়। ১৯১১ সালের আইনটি ভারতীয় উপমহাদেশসহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে প্রয়োগযোগ্য ছিল। ১৯১৪ সালে ভারতবর্ষে এই আইনটির প্রচলন করা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুইটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও এই আইন প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার কপিরাইট অধ্যাদেশ জারি করে, যা ১৯৬৭ সালে কার্যকর হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার এ অধ্যাদেশটির ব্যাপক সংশোধন করে। এরপর অধ্যাদেশটি বাতিল করে ২০০০ সালে কপিরাইট আইন এবং ২০০৬ সালে কপিরাইট বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়।

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত WIPO (World Intellectual Property Organization) এর সদস্যভুক্তিসহ Universal Copyright Convention, Berne Convention এবং পঠন প্রতিবন্ধীদের সহায়ক চুক্তি Marrakesh Treaty-তে Signatory হয়েছে। এ সমস্ত Convention এবং Treat’র সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের আইনি কাঠামোকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে কপিরাইট আইন-২০২৩ মহান সংসদে উপস্থাপনের পর্যায়ে রয়েছে। আইনটি প্রবর্তনের মাধ্যমে সৃজনশীল কর্মের প্রণেতাগণের স্বার্থ ও স্বত্বের সুরক্ষা প্রদানের বর্তমান প্রতিবন্ধকতা অনেকাংশে দূর হবে।

বাংলাদেশের কপিরাইট আইনে কপিরাইট নিবন্ধন, কপিরাইট স্বত্বনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তিপত্রের নিবন্ধন, কপিরাইট ও রিলেটেড রাইটের মেয়াদ, কপিরাইট সমিতির নিবন্ধন, কপিরাইট সংক্রান্ত লাইসেন্স, কপিরাইট বোর্ডের কাঠামো ও কার্যপরিধি কপিরাইট লঙ্ঘনের বিষয়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি প্রতিকার প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে।

এই আইনের অধীনে সাহিত্যকর্ম, সংগীতকর্ম, শিল্পকর্ম, আলোকচিত্রকর্ম, স্থাপত্যকর্ম, ভাস্কর্যকর্ম, মানচিত্র ও রেখাচিত্র, চলচ্চিত্রকর্ম, রেকর্ডকর্ম, বিজ্ঞাপনকর্ম, সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট প্রভৃতি কর্মের প্রণেতাদের কপিরাইট নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে।

এছাড়া সৃজনশীল কর্মের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য ব্যক্তির অনুকূলে রিলেটেড রাইট নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে। সাহিত্যকর্মের প্রকাশক, সংগীতকর্মের সম্পাদনকারী তথা গায়ক, চলচ্চিত্রের সম্প্রচার সংস্থা রিলেটেড রাইটের অধিকারী হয়। বাংলাদেশ কপিরাইট আইনে স্বত্বাধিকারীর অধিকারসমূহকে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে, যেমন- পুনরুৎপাদন অধিকার, পরিবেশন অধিকার, উপস্থাপনের অধিকার, জনসমক্ষে সম্প্রচারের অধিকার, আবৃত্তির অধিকার, প্রদর্শনীর অধিকার, হস্তান্তরের অধিকার, অনুবাদ, রূপান্তর এবং অভিযোজনের অধিকার। কপিরাইটের স্বত্বাধিকারীর অনুমতি ব্যতীত কেউ বর্ণিত অধিকারসমূহ ভোগ, প্রয়োগ বা চর্চা করলে তিনি কপিরাইট লঙ্ঘন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হবেন যা আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিদ্যমান আইনে কপিরাইটের প্রয়োগ সংক্রান্ত বিধিবিধান স্বয়ংসম্পন্ন না হওয়ায় প্রস্তাবিত আইনে টাস্কফোর্স ও মোবাইল কোর্টের বিধান সংযোজনসহ কপিরাইট সমিতির কাজসমূহকে সুস্পষ্ট করা হয়েছে এবং লোকজ্ঞান ও লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণে আলাদা একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কপিরাইট নিবন্ধনের গুরুত্ব

ডিজিটাল যুগে প্রণেতার অনুমতি ব্যতিরেকে কর্মসমূহ ব্যবহারের মাধ্যমে তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়। এই লঙ্ঘনকে পাইরেসি বলা হয়। মেধাস্বত্ব বিকশিত হওয়ার পথে পাইরেসি একটি বড় অন্তরায়। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে কপিরাইট নিবন্ধন প্রণেতার অধিকার রক্ষা তথা মেধাসম্পদ সুরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত।

কপিরাইট নিবন্ধনের মাধ্যমে সৃজনশীল কর্মের নকল প্রতিরোধ সম্ভব হয়। ফলে কর্মের প্রণেতা নৈতিক স্বীকৃতি ও রয়্যালিটি পায় এবং সাধারণ জনতা রক্ষা পায় নকল পণ্য ব্যবহারের হাত থেকে।

কপিরাইট নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রণেতা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্তি সৃজনশীল মানুষগুলোকে নব নব সৃজনশীল কর্ম তৈরিতে উৎসাহিত করে।

কপিরাইট নিবন্ধনের মাধ্যমে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হয়, যা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।

কপিরাইট নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রণেতার ও তার উত্তরাধিকারীদের স্বত্ব সুরক্ষিত হয়।

কপিরাইট নিবন্ধনের মাধ্যমে কর্মের প্রণেতা তার সৃজনশীল কর্ম বিভিন্ন পন্থায় পুনরুৎপাদন, বাজারজাতকরণ, জনসম্মুখে প্রদর্শন, লাইসেন্স প্রদান প্রভৃতি ক্ষমতা বিনা বাধায় প্রয়োগ করতে পারে।

এছাড়া অন্যান্য সরকারি দলিলের মতো কপিরাইট নিবন্ধন সনদ যেকোনো আদালতে বিপরীত প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত মেধাস্বত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

অধিকন্তু ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো সৃজনশীল কর্ম সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কপিরাইট নিবন্ধন সনদ থাকা প্রায় বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কপিরাইট আইন অনুসারে কপিরাইট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ সৃজনশীল কর্মের প্রণেতার জন্য অন্য পন্থায়ও তার মেধাস্বত্ব প্রমাণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে কপিরাইট নিবন্ধন সনদ ব্যতীত মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও প্রমাণ অনেকাংশে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে মেধাস্বত্বের চূড়ান্ত মালিকানা নিশ্চিতকরণ ও প্রগতিশীল বিশ্বে দেশের সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করার ক্ষেত্রে কপিরাইট নিবন্ধনের কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যমান কপিরাইট আইনে একজন মেধাস্বত্বের স্বত্বাধিকারীর অধিকার কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অধিকার হননকারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে স্বত্বাধিকারীর ক্ষতিপূরণের আইনি প্রতিকার রয়েছে। একইভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কপিরাইট বোর্ডও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এ আইন অনুযায়ী কপিরাইট বোর্ড স্বত্ব নিয়োগের বিষয়ে বিরোধের ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ পক্ষের নিকট হতে অভিযোগপ্রাপ্তি এবং তদভিত্তিতে তদন্তের পর রয়্যালটি উদ্ধারের আদেশসহ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত আদেশ প্রদান করতে পারে। কপিরাইট বোর্ডের নিকট হতে এ ধরনের প্রতিকারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে মেধাস্বত্বের স্বত্বাধিকারীর স্বত্বের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনসহ পক্ষসমূহের মধ্যকার চুক্তিপত্রের রেজিস্ট্রেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রস্তাবিত কপিরাইট আইন ২০২৩-এ কপিরাইট বিরোধ নিরসন ও মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় কপিরাইট রেজিস্ট্রার ও বোর্ডের আইনি ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করা হয়েছে- তার সুফলপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কপিরাইট নিবন্ধন অত্যাবশ্যক। সূত্রঃ ঢাকা টাইমস