আন্তর্জাতিক খবর

শান্তিতে নোবেল পেলেন ইরানের নার্গিস মোহাম্মদী

২০২৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ইরানে কারাবন্দি মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে নাম ঘোষণা করে নরওয়ের নোবেল কমিটি। ইরানে নারীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সবার জন্য মানবাধিকারের পক্ষে  সোচ্চার  থাকার জন্য তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নার্গিস মোহাম্মদী একজন  নারী,  মানবাধিকারকর্মী ও স্বাধীনতা যোদ্ধা। তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য সাহসী লড়াইয়ের ফলে  ব্যক্তিগত অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ইরানের শাসকরা  তাকে ১৩ বার গ্রেফতার করেছে, পাঁচবার  দোষী সাব্যস্ত করেছে, সব মিলিয়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড ও ১৫৪টি বেত্রাঘাত করেছে। তিনি এখনও কারাগারে।

নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে  ইরানে নারীদের নিয়ে সরকারের বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে গত বছর যে হাজার হাজার ইরানি নারী বিক্ষোভ করেছেন তাদের  আন্দোলনেরও স্বীকৃতি দেওয়া  হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা  যে মন্ত্র গ্রহণ  করেছেন তা হলো, নারী,  জীবন, স্বাধীনতা।  যা নার্গিস মোহাম্মদীর আত্মত্যাগ ও কাজকে  উপযুক্তভাবে প্রকাশ করে।

ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডার্স নামের মানবাধিকার সংগঠনের মতে, তেহরানের এভিন কারাগারে ১২ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন মোহাম্মদী। তার  বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে  রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকানি।

২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী আরেক ইরানি নারী শিরিন এবাদির নেতৃত্বাধীন এনজিও  ডিফেন্ডার্স অব হিউম্যান  রাইটস সেন্টার-এর উপ-প্রধান তিনি।

১৯তম নারী হিসেবে মোহাম্মদী ১২২ বছর পুরনো নোবেল শান্তি  পুরস্কারটি  পেলেন।

এবার এই পুরস্কারের জন্য মনোনীতি ব্যক্তি  ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩৫১ জন। এখন পর্যন্ত প্রতি বছর  মনোনীত সংখ্যার ক্ষেত্রে এটি  দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৩৭১। এ বছর  মনোনীতদের মধ্যে ২৫৯ ব্যক্তি ও  ৯২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। টানা অষ্টম বছর এ পুরস্কারের জন্য  মনোনীতের সংখ্যা ছিল ৩ শতাধিক।

এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের আর্থিক প্রায় ১০ লাখ ডলার। আর্থিক পুরস্কারের সঙ্গে বিজয়ী পাবেন  ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের একটি পদক  ও সনদ।  বিভিন্ন  সময়ে আর্থিক পুরস্কারের মূল্য কমেছে ও বেড়েছে। নোবেল ফাউন্ডেশন বলেছে, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ায় এবার তা বাড়ানো হয়েছে।

২০২২ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন বেলারুশের মানবাধিকার আইনজীবী আলেস বিলিয়াতস্কি, রাশিয়ান মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল এবং ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ।

২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পান ফিলিপাইনি বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক মারিয়া রেসা এবং রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মোরাতোভ। মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় নিজেদের ভূমিকার কারণে মারিয়া রেসা এবং দিমিত্রি মোরাতোভকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

২০২০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার লড়াইয়ে অনন্য ভূমিকার জন্য সংস্থাটিকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।

আর ২০১৯ সালে এ পুরস্কার জেতেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান পুরস্কার ভূষিত হন তিনি।

এর আগে নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার তেরেসা ও বারাক ওবামার মতো ব্যক্তিত্বরা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন, সাহিত্য এবং শান্তি বিষয়ে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

২০২৩ সালের অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে (অর্থনীতি) নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে সোমবার (৯ অক্টোবর)। এবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে হাঙ্গেরিয়ান-মার্কিন বিজ্ঞানী কাতালিন ক্যারিকো ও মার্কিন চিকিৎসক-বিজ্ঞানী ড্র ওয়াইজম্যান, পদার্থবিজ্ঞানে মার্কিন বিজ্ঞানী পিয়ের অ্যাগোস্টিনি, হাঙ্গেরীয় বিজ্ঞানী ফেরেন্স ক্রাউজ ও ফরাসি বিজ্ঞানী অ্যান লিয়ের, রসায়নে ফরাসি রসায়নবিদ মুঙ্গি জি বাওয়েন্দি, মার্কিন গবেষক লুইস ই ব্রুস ও অ্যালেক্সি আই একিমোভ এবং সাহিত্যে নরওয়ের লেখক ও নাট্যকার ইয়ন ফসে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল নিজের মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান।