রিমান্ডে ‘ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা’ জানিয়ে আদালতে বিচারককে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আগেরবার আমি ও মির্জা ফখরুলকে কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সেলে রাখা হয়েছিল। এবার রিমান্ডে আমাকে রাখা হয়েছে ফ্লোরে। এবার তো হেঁটে আসছি। পরেরবার হয়তো হুইল চেয়ারে করে আমাকে আদালতে উঠতে হবে।’

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে আজ রবিবার ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের কাছে এসব কথা বলেন মির্জা আব্বাস।

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় এ আসামি সাফাই সাক্ষ্য দেবেন মর্মে আদালতকে জানানো হয়। পরে আগামী ৮ নভেম্বর সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম।

মির্জা আব্বাসের পক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আজ এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য ছিল। আমরা আদালতের কাছে মামলাটির ন্যায়বিচারের স্বার্থে যুক্তিতর্ক থেকে উত্তোলন করে সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আবেদন করি। ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মির্জা আব্বাসের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নথিভুক্ত রেখেছেন এবং সাফাই সাক্ষীর জন্য আগামী ৮ নভেম্বর তারিখ করেন।’

আজ শুনানি চলাকালে আদালতের কাছে মির্জা আব্বাস কথা বলার জন্য অনুমতি চান। আদালত কথা বলার অনুমতি দিলে তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সেলে রাখার বিষয়ে হাইকোর্টে নজরে আনলে আমাকে সরাসরি ডিভিশন দেন। আমার বয়স হয়েছে, ডিভিশন বিষয়টি বিবেচনা করবেন স্যার।’ এরপর বিচারক বলেন, ‘আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। আমি সরাসরি হাইকোর্টের মতো আদেশ দিতে পারি না।’ তখন আইনজীবীরা বলেন, ‘আপনি (বিচারক) জেলকোড অনুযায়ী সরাসরি আদেশ দিতে পারেন।’

এ মামলায় গত ৩১ অক্টোবর মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন একই আদালত। আজ রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার নাশকতার মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাসকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওই মামলায় আজ মির্জা আব্বাসকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ১ নভেম্বর তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদের মামলায় আফরোজা আব্বাসের নামে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮২৮ টাকার সম্পদ প্রকৃতপক্ষে তার স্বামী মির্জা আব্বাসের সহায়তায় ও অবৈধ উৎসের আয় থেকে অর্জিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মির্জা আব্বাস ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সংসদ সদস্য, মেয়র ও মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত আফরোজা আব্বাসের নামে ওই টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের তদন্তে অবৈধ ওই সম্পদ হস্তান্তর, রূপান্তর ও অবস্থান গোপন করতে কৌশল অবলম্বন করার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা আফরোজা আব্বাস ও তার স্বামী মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০১৯ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় দুদকের সাবেক সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো.সালাহউদ্দিন মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ২০ কোটি ৭৬ লাখ ৯২ হাজার টাকার সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছিল।