অগ্রক্রয় বা প্রি-এমশন শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো, অন্যদের চেয়ে একজনের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্রয় করার অধিকার। আপনার বাবার একটি জমি আপনার ভাই ওয়ারিশ হিসাবে পেয়েছে এখন আপনার ভাই উক্ত জমিটি বিক্রি করতে চাইলে উক্ত জমিটি কেনার ক্ষেত্রে অন্য সকল ক্রেতার থেকেও আপনি আইনানুগভাবে একটু বেশি অধিকারী। আর এই সুবিধাকেই আমরা বলে থাকি অগ্রক্রয়ের অধিকার। অর্থাৎ অন্যদের থেকেও আগে কেনার অধিকার।
জমি বিক্রির কত দিনের মধ্যে আপনি আদালতে অগ্রক্রয়ের জন্য মামলা করতে পারবেন ?
জমি বিক্রয়ের খবর জানার পর থেকে ৪ মাসের মধ্যে অগ্রক্রয় মামলা করতে হবে অর্থাৎ কৃষি জমির ক্ষেত্রে যেমন ছিল ২ মাসের মধ্যে কিন্তু অকৃষি জমির ক্ষেত্রে ৪ মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে উক্ত রেজিস্ট্রি দলিলে যে বিক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে সে পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে।সেই সাথে বিক্রয়মূল্যের অর্থের ওপর শতকরা ৫ % হারে ক্ষতিপূরনের টাকা কোর্টে জমা দিতে হবে।
অর্থাৎ কৃষির ক্ষেত্রে যেমন ১০০ টাকার উপর দিতে হত ১২৫ টাকা আর অকৃষির ক্ষেত্রে কিন্তু ১০০ টাকায় দিতে হবে ১০৫ টাকা সাথে আরো কিছু আনুসাঙ্গিক খরচ দিতে হবে।মনে রাখবেন পৌর এলাকা ও সিটি কর্পোরেশনের এলাকার ভেতর সব জমি অকৃষি জমি হিসেবে গণ্য হবে।
অগ্রক্রয়ের মামলা করার নিয়মঃ
অগ্রক্রয়ের অধিকার আদায়ের জন্য ওপরে বর্ণিত ব্যক্তিরা ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ ধারা মতে_
ক. হস্তান্তরের বিষয় জানার বা দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার দুই মাসের মধ্যে মামলা দায়ের,
খ. মামলার আবেদনের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ জমা দিতে হবে,
গ. এ ছাড়া বিক্রয় মূল্যের ওপর বার্ষিক ৮ শতাংশ সরল সুদ জমা দিতে হবে।
১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী_
১) অগ্রক্রয়ের দরখাস্তের সঙ্গে বিক্রীত মূল্যে ওপর ৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ জমা দিতে হয়, ২) অগ্রক্রয়ের দরখাস্ত জমা দেওয়ার সময়সীমা এক মাস, ৩) ক্রেতা, প্রতিপক্ষ খরিদের পর জমির উৎকর্ষ সাধনের কোনো অর্থ ব্যয় করলে তার ওপর শতকরা সোয়া ছয় টাকা হারে সুদ দেওয়ার বিধান আছে।
ওপরের শর্তগুলোর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে প্রিয়েমশনের দরখাস্ত অগ্রাহ্য হবে। এত কিছুর পরও ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ এবং ১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের ২৪ ধারা বিধান অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে অগ্রক্রয়ের মামলা চলে না, যদি_
১. বিক্রীত জমি বসতবাড়ি হয়।
২. অগ্রক্রয়ের মামলা দায়ের করার আগে বিক্রীত জমি বিক্রেতার কাছে হস্তান্তরিত হয়।
৩. উক্ত বিক্রয় যোগসাজশী (Collusive) বা জাল (Fraudulent) বিবেচিত হয়।
৪. বিনিময় বা ভাগবাটোয়ারাসংক্রান্ত সম্পত্তি হস্তান্তর হয়।
৫. স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীর বরাবরে উইল বা দানমূলে সম্পত্তি হস্তান্তর করে।
৬. হেবা-বিল-এওয়াজ মূলে হস্তান্তর করলে।
৭. রক্তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তিন পুরুষের কোনো দান বা উইল মূলে হস্তান্তর করে।
৮. মুসলিম আইনে ওয়াক্ফ এবং ধর্মীয় কারণে বা দাতব্য উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত হস্তান্তরে।
কৃষি জমির ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় আইনের নিয়মঃ-
উত্তরাধিকার সূত্রে যদি কেউ সহ-শরিক হয় তবে শুধুমাত্র অগ্রক্রয়ের অধিকারী হবে অর্থাৎ মনেকরুন আপনার পিতামাতার সম্পত্তি উত্তরাধিকার হিসাবে যারা প্রাপ্ত হয়েছে তারা যদি উক্ত জমিটি বিক্রি করতে চাই তবে আপনি অগ্রক্রয়ের অধিকারী।
আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরনের আইন অনুসারে অগ্রক্রয়ের মামলা হয়ে থাকেঃ-
১. ‘রাষ্ট্রীয় আধগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন’ (সংশোধনী) ২০০৬ এর ৯৬ ধারা অনুসারে
২. ‘অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন’ এর ২৪ ধারা অনুসারে
কোন আইন অনুসারে অগ্রক্রয়ের অধিকারটি পাবেন তা মূলত নির্ভর করে জমিটির ধরনের উপর অর্থাৎ জমিটির ধরন যদি কৃষি জমি হয় তবে মামলা হবে ‘রাষ্ট্রীয় আধগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন’ অনুসারে। আর জমিটি যদি হয় বসতভিটা, আবাসিক এলাকা, শিল্পভিত্তিক জমি সেক্ষেত্রে মামলাটি পরিচালিত হবে ‘অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন’ অনুসারে।
কত দিনের মধ্যে অগ্রক্রয়ের জন্য মামলা করতে হবে ?
যেদিন জমি বিক্রয়ের জন্য রেজিস্ট্রি হয়েছে সে দিন থেকে ২ মাসের মধ্যে মামলা করতে পারবেন অর্থাৎ আপনি যেদিন আপনার উত্তরাধিকারের জমিটি বিক্রয় হয়েছে সেদিন থেকে পরবর্তী ২ মাসের মধ্যে কোর্টে গিয়ে উক্ত জমির মূল্য কোর্টে জমা দিয়ে আপনি অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারবেন।
অগ্রক্রয়ের মামলা করতে কোর্টে কত টাকা জমা দিতে হবেঃ-
অগ্রক্রয় অধিকারী ব্যক্তিকে আদালতে প্রি এমপশনের মামলা করতে হবে। মামলা করার সময় অবশ্যই তামাদির কথা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, আইনে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ বা সময় নির্ধারিত থাকে যার ভিতরে মামলা না করলে তার অধিকার বিলুপ্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ উপরে উল্লেখিত সময়সীমার পরে মামলা করলে সে মামলা আদালতে টিকবেনা (একে আইনের ভাষায় তামাদি বলে বারিত বলে)।
উক্ত রেজিস্ট্রি দলিলে যে বিক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে সে পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে। একই সাথে বিক্রয়মূল্যের অর্থের ওপর ২৫ % হারে ক্ষতিপূরনের অর্থ কোর্টে জমা দিতে হবে। অর্থাৎ বিক্রয়ের সময় দলিলে যে মূল্য দেওয়া হয়েছে উক্ত মূল্য এবং উক্ত মূল্যের উপর আরো ২৫ % অতিরিক্ত টাকা জমা দিতে হবে ।
ধরুন জমিটি যদি ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রিয় হয় এবং দলিলে ৫ লক্ষ টাকা লেখা হয়ে থাকে তবে কোর্টে অগ্রক্রয়ের জন্য আবেদনকারীকে ৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। অগ্রক্রয়ের আবেদন এবং উক্ত নির্ধারিত টাকা জমা দেয়ার পর আদালত উক্ত জমির বর্তমান ক্রেতাকে সমন দেবেন এবং কোর্টে হাজির হতে বলবেন।
সবকিছু বিবেচনা করে আদালত যদি আবেদনকারীর উপর সন্তুষ্ট হয় তবে উক্ত জমিটির বর্তমান ক্রেতাকে জমিটি আবেদনকারীর অনুকূলে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য আদেশ প্রদান করবেন তবে এক্ষেত্রে কিন্তু আবেদনকারী প্রথমে কোর্টে যে টাকা জমা দিয়েছিল তা কিন্তু জমির বর্তমান ক্রেতা পাবে।
এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলাটি দায়ের করতে হবে। বিক্রীত জমির সব কবলা দলিলে উল্লেখিত মূল্যমান অনুযায়ী আর্থিক এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলা করতে হবে। অর্থাৎ জমির মূল্যমান যদি ২ লক্ষ টাকার নিচে হয় ‘সহকারী জজ আদালতে’, ২ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষের মধ্যে হলে ‘সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে’, আর ৪ লক্ষের ঊর্ধে মূল্যমান হলে ‘যুগ্ন জজ আদালতে’ মামলা দায়ের করতে হবে। মামলা দায়ের করার সাথে সাথে আদালতে নিম্নে উল্লেখিত হিসাবে টাকা জমা দিতে হবে অন্যথায় আদালত মামলাটি খারিজ করে দিবে।
মামলা দায়ের করতে হলে আদালতে চার ধরনের টাকা জমা দিতে হয় অন্যথা মামলাটি আদালত খারিজ করে দেবে।
ক। সাব কবলা দলিলে উল্লেখিত জমির মূল্য
খ। উক্ত মূল্যের উপর বার্ষিক ২৫% হারে ক্ষতিপূরণ বাবদ
গ। উক্ত মূল্যের বার্ষিক সরল সুদে ৮% হারে (২ এবং ৩ নং হিসাব করতে হবে দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ থেকে মামলা দায়েরের সময় পর্যন্ত)
ঘ। প্রথম ক্রেতা কতৃক উন্নয়ন বাবদ অন্যান্য টাকা যা পরবর্তীতে আদালত সমীচীন মনে করলে জমা দিতে নির্দেশ দিবেন।
অকৃষি জমির ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় আইনের নিয়মঃ-
আমরা দেখলাম কৃষি জমির ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় আইনের নিয়ম এখন দেখবো জমিটি যদি কৃষি না হয়ে অকৃষি জমি অর্থাৎ জমিটি যদি বসতভিটা, আবাসিক এলাকা, শিল্পভিত্তিক জমি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অগ্রক্রয় আইনের নিয়মঃ-
উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিক। ক্রয়সূত্রে সহ-শরিক অর্থাৎ মনে করুন একটি জমি ২ জন মিলে কিনলেন তবে এখানে একজন অন্যজনের ক্রয়সূত্রে সহ-শরিক
জমিটির চতুর্দিকের বসবাসরত জমির মালিকগণ অর্থাৎএখানে দেখুন কৃষি জমির ক্ষেত্রে শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিক অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারতো কিন্তু অকৃষির ক্ষেত্রে কিন্তু ৩ শ্রেণীর মানুষ এই সুবিধা পাবে।
অগ্রক্রয় সম্পর্কিত আইন:
প্রথম Bengal Tenancy Act, 1885 এর ২৬ ধারায় অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিধান প্রণয়ন করা হয়। এ আইনটি কৃষকদের মুক্তির সূচনামূলক আইন হলেও অনেক ক্ষেত্রে আইনটি অকার্যকর ও অসম্পূর্ণ হওয়ায় আইনটি বাতিল করে ১৯৫০ সালে State Acquisition and Tenancy Act প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের ৯৬ ধারায় অগ্রক্রয় সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান প্রণয়ন করা হয়।
আপিলের বিধান :
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০-এর ৯৬(১২) ধারা অনুযায়ী আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে একবার আপিল করা যাবে। কিন্তু ওই আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আর দ্বিতীয় আপিল করা যাবে না। তবে প্রথম আপিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির ১১৫ ধারা অনুযায়ী Revision দায়ের করা যায়।
যদি কোনো দলিল ২/১২/১৯৭৫ইং তারিখে রেজিস্ট্রির জন্য উপস্থাপন করা হয় এবং ঐ দলিলটি যদি ২৪/১০১৯৭৯ তারিখে রেজিস্ট্রি হয় এবং অগ্রক্রয় মামলাটি যদি ১৩/২/১৯৮০ইং তারিখে দায়ের করা হয় সেক্ষেত্রে আপিল আদালত ঐ মামলাটি তামাদি বলে বারিত করতে পারবে না। {31DLR (AD) (111)}
হোল্ডিং তথা কোনো জমির খন্ড বা খন্ড সমূহের কোনো আংশিক অংশের জন্য অগ্রক্রয় মামলা করার অনুমোদন এর বিধান নাই। {28DLR 400}
যদি কোনো ক্রেতা কোনো জমি ক্রয় করার পর ঐ জমিটি অগ্রক্রয়কারীর সামনে চাষাবাদ করে থাকে সেক্ষেত্রে ঐ জমি বিক্রয় সম্পর্কে অজ্ঞতা বা অজানার অজুহাতে ১২ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায় না। {33DLR 39}
অগ্রক্রয় অধিকারটি উত্তরাধিকার সূত্রে অধিকার অর্থাত্ কোনো ব্যক্তি অগ্রক্রয়ের মামলা করে যদি মারা যান সেক্ষেত্রে ঐ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারিগণও ঐ অগ্র্রক্রয় মামলার স্থলাবর্তী হয়ে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। {45DLR(AD) 118}
অগ্রক্রয়ের মামলা চালু থাকায় যদি কোনো সহ অংশীদার তার কোনো জমি ফেরত পায় তাহলেও অংশীদারদের অগ্রক্রয়ের মামলার অধিকারের কোনো ক্ষতি হয় না। {47DLR 607}
যদি একই দলিলে কয়েকটি হোল্ডিং বা জমির খন্ড হস্তান্তর করা হয়ে থাকে তাহলে এরূপ জমি খন্ডের সহ অংশীদার ঐ জমি খন্ডের প্রিএমশন মামলা করার জন্য দরখাস্ত করতে পারবেন। ২টি পৃথক জমি খন্ডের জন্য একই দরখাস্তে অগ্রক্রয় মামল করা যেতে পারে। {23DLR 68}
১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৯৬ ধারা অনুযায়ী একজন ঘোষিত (Notified) বা অঘোষিত (Non Notified) সহ অংশীদার নোটিশ জারীর পর থেকে ৪ মাসের মধ্যে অগ্রক্রয় মামলা করতে পারবে এবং হস্তান্তরিত জমির পাশ্ববর্তী জমির মালিক ও জমিটি হস্তান্তরের বিষয় জানার ৪ মাসের মধ্যে অগ্রক্রয় মামলার জন্য দরখাস্ত করতে পারবেন ।{21DLR 463}
১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনন্সি এক্টের ১১৭ ধারার বিধান অনুযায়ী কোনো জমির সকল সহ অংশীদারগণের উপর নোটিশ জারীর পর জমাভাগ করা হয়েছে তা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত মূল জমা অক্ষত বা অখন্ড থাকবে এবং কোনো জমির (হোল্ডিং) সহ অংশীদার ঐ জমির সহ অংশীদার হিসাবে বিদ্যমান থাকবেন এবং তার অগ্রক্রয় মামলা করার অধিকার বলবত্ থাকবে। {52DLR 223}
অগ্রক্রয় মামলা করতে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি বা দরখাস্তকারী ব্যক্তি যদি ১৯৫০ সালের স্টেট একুই জিশন এন্ড টেনন্সি এক্টের ৯০ ধারা অনুযায়ী জোত জমি দখলে রাখার সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে যা প্রয়োজনীয় যেরূপ কোনো তথ্য উল্লেখ করতে কিংবা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। যেক্ষেত্রে দরখাস্ত কারীর দরখাস্ত খারিজ হয়ে যাবে। {33DLR 318}
দীর্ঘদিন অতিবাহিত পর যদি কোনো ব্যক্তি ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজশন এন্ড টেনসি এক্টের ৯৬(১) ধারা অনুযায়ী তার (প্রি এমটর) অগ্রক্রয় অধিকার প্রয়োগ করতে চায় তাহলে ঐ ব্যক্তিকে বিতর্কিত জমিটির হস্তান্তরের বিষয়ে দেরীতে অবগত হওয়া বা জানার ব্যাপারটি তাকেই বিশ্বাসযোগ্য স্বাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। {50DLR-193}
কোনো অগ্রক্রয় মামলার দরখাস্তকারী যদি সহ অংশীদার হয়ে থাকেন তাহলে তিনি অবশিষ্ট সকল সহ-অংশীদারকে এবং দরখাস্তকারী যদি হস্তান্তরিত জমির সংযুক্ত বা পাশ্ববর্তী জমির মালিক হন তাহলে হস্তান্তরিত জমির সংযুক্ত বা পাশ্ববর্তী জমির মালিক হন তাহলে হস্তান্তরিত জমির পাশ্ববর্তী জমির মালিকগণকে এবং হস্তান্তর গ্রহীতাকে পক্ষ করে প্রি এমশন মামলা দায়ের করতে হবে। {33DLR(AD) 113}
উত্তরাধিকার সূত্রে রেকর্ডকৃত বা অ-রেকর্ডকৃত সকল সহ অংশীদারকে অগ্রক্রয় মামলায় আবশ্যকীয় পক্ষ করতে হবে অন্যথায় ঐ মামলার প্রয়োজনীয় বিষয় ব্যর্থ হয়ে যাবে। {28DLR(AD) 5, 33DLR(AD) 113}
অগ্রক্রয় মামলার জন্য দরখাস্ত কারী ব্যক্তিকে মামলা করার সময় পনের টাকা এবং ক্ষতিপূরণর টাকা জমা না দিলেও মামলা করা যাবে কিন্তু আদালত কর্তৃক প্রদত্ত সময় সীমার মধ্যে পনের টাকা এবং ক্ষতিপূরণের টাকা দাখিল করতে হবে। {IBLD(HCD) 328. }
সহ অংশীদার তার উপর নোটিশ জারীর পর মূল অগ্রক্রয় মামলায় যোগ দিতে পারবেন অথবা সময় সীমার মধ্যে স্বতন্ত্রভাবেও মামলা দায়ের করতে পারবেন তবে তাকে যে নন জয়ন্ডার অফ পার্টিজ করা হয়েছে তাকে সেই সুযোগটি প্রথমেই নিতে হবে নইলে ঐ আপত্তি গ্রহণ যোগ্য হবে না। (20DLR 480)
যদি কখনও ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এক্টের ৯৬(১) ধারা অনুযায়ী অগ্রক্রয়ের দরখাস্তটি রক্ষনীয় নয় বলে খারিজ (ডিসমিস) হয়ে যায় তাহলে তার অর্থ এই নয় যে, যারা এই আইনের ৮৯ ধারা মতে নোটিশ জারীর পর মামলায় শরিক হন বা যোগদান করেন তাদের প্রি-এমশনের অধিকার বাতিল হয়ে যাবে। তাদের ও পরিস্কার যে, সহ দরখাস্তকারীগণের ক্ষেত্রে হস্তান্তর বিষয়টি অবগত হওয়ার তারিখ নোটিশ জারীর তারিখ হতে হিসাব করতে হবে। {36DLR 250}
১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৯৬ (৫) ধারা অনুযায়ী উত্তরাধিকার সূত্রে অংশীদারদের অগ্রক্রয় মামলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে তারপর ক্রয়সূত্রে সহ অংশীদারের এবং তারপর পাশ্ববর্তী জমির মালিকের অধিকার আসবে।
যদি কোনো জমির হস্তান্তর হেবা বিল এওয়াজের মাধ্যমে হয়ে থাকে এবং হস্তান্তর গ্রহীতাগণ রক্তের সম্পর্কের ৩ তিন ডিগ্রীর মধ্যে না হন তাহলে অগ্রকয় বা প্রি এমশনের মামলার দরখাস্ত মঞ্জুর করা যাবে। {49DLR 477}
১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনন্সি এক্টের ৯৬(১০) ধারা অনুযায়ী উইল বা ইচ্ছাপত্র বা দান কিংবা এওয়াজ বদলের মাধ্যমে কোন জমি হস্তান্তরিত হলে সেই হস্তান্তরের অগ্রক্রয় বা প্রি-এমশন মামলা হতে মুক্ত বা বহির্গত বলে গণ্য হবে । {48DLR 170}
কোনো ব্যক্তির পিতা যদি মূল মালিকের নিকট হতে প্রি-এমশনভুক্ত জমিটির মালিক হয়ে থাকেন এবং পিতার মৃত্যুর পর পূত্রগণ/উত্তরাধিকারী গণ ঐ জমির মালিক বলে গণ্য হবেন এবং পূত্রগণ উত্তরাধিকার সূত্রে জমিটির মূল মালিকের সহ-অংশীদার বলে গন্য হবেন। {35DLR(AD) 54}
১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৯৬ ধারার ১০ উপধারায় উল্লেখিত ব্যতিক্রম অনুযায়ী যদি কোনো জমির হস্তান্তর আর্থিক বিবেচনা ব্যতীত হেবা বিল এওয়াজ কোন জমির হস্তান্তর আর্থিক বিবেচনা ব্যতীত হেবা বিল এওয়াজের মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয় তাহলে হস্তান্তরিত জমিটির ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় বা প্রি-এমশন মামলা করা যাবে না ।যদিও হস্তান্তরটি হস্তান্তর গ্রহীতা ও দাতার মধ্যে রক্ত সম্পর্কীয় ৩ (তিন) ডিগ্রীর মধ্যে না হয়। {50DLR544.}
অগ্রক্রয় সম্পর্কিত মুসলিম আইনের বিধান সমূহ প্রাসঙ্গিক মনে করায় নিম্নে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো:
আমার ধারনা, ইংরেজ আইনে অগ্রক্রয় ধারণাটি মুসলিম আইন থেকে এসেছে। কারণ মুসলিম আইনে পারিবারিক বা গোত্রীয় বন্ধন একটি গুরুত্ববহ ব্যাপার। মুসলিম আইনে তিন শ্রেণীর লোক অগ্রক্রয় দাবি করতে পারে। যথা:
ক) শাফি-ই-শরিক: উত্তরাধিকার বা ক্রয় সূত্রে সহ অংশীদার
খ) শাফি-ই-খালিত: যে জমির মধ্য দিয়ে বা সংলগ্ন পথ, পানির ড্রেন যাদের রয়েছে
গ) শাফি-ই-জার: সংলগ্ন জমির সত্ত্বাধিকারী
এছাড়া মুসলিম আইনে মামলার রায় হওয়ার পর টাকা জমা দিতে হয়।