রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে করা মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার পর রায় ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এএম জুলফিকার হায়াতের আদালতে রায় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন রায় প্রস্তুত না থাকায় আজকের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়।
তারও আগে গত ৩১ আগস্ট মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় পেছানো হয়েছে রায়ের তারিখ। মামলার উভয় আসামিই জামিনে রয়েছেন।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাতযাপনের ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে দাবি করেছিল মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য— সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি।
শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ডিবির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম।
তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এর পর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি এবং প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে।
আদিলুর ও এলানের কারাদণ্ডের রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এই উদ্বেগের কথা প্রকাশ করা হয়। কারাদণ্ড ছাড়াও আদিলুর ও এলানকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষায় সুশীল সমাজ এবং মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থাগুলো যে ভূমিকা পালন করে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার সম্পর্কিত ‘অনলাইন এবং অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক ২০২২ সালের কান্ট্রি রিপোর্ট তুলে ধরে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে—বাংলাদেশের মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে আদালতের রায় মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং সুশীল সমাজের গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালনের ইচ্ছাকে আরও সংকুচিত করতে পারে বলে মনে করছে মার্কিন দূতাবাস।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গত কয়েক দশক ধরে যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন ‘অধিকার’ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট করেছে। আমরা গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান হিসাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং একটি প্রাণবন্ত সুশীল সমাজকে সমর্থন করে যাচ্ছি এবং সেই মৌলিক অধিকারগুলোর প্রয়োগ সীমিত করার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করছি। ”