অবসরজীবনের জন্য আর্থিক ও মানসিক প্রস্তুতি – Ekush.Info

সুস্থভাবে অবসরে যাবেন ভেবেছেন, এটি একটি মহার্ঘ ভুলে পর্যবসিত হতে পারে

সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করে অবসর জীবনে এসে একটু সুস্বাস্থ্য, সম্পদ, আর সুখের কথা চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে কিছুটা দুঃখের খবর। আমাদের মধ্যে একদল অবসরজীবনে এসে এ লক্ষ্যগুলোর সবগুলো পূরণ করতে পারবেন না। সংখ্যায় এ দলটাই ভারী।

ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চ থিংক ট্যাংক অনুসারে, এ সময়ে জন্ম নেওয়া (ব্রিটিশ) নারীদের কেবল ১৬ শতাংশ সুস্থসবল শরীর নিয়ে কর্মজীবন থেকে অবসরে যাবেন। আর কেবল নয় শতাংশ পুরুষের ক্ষেত্রে এমন ভাগ্য ঘটবে।

প্রত্যাশিত সাধারণ জীবন ও প্রত্যাশিত সুস্থ জীবনের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকতে পারে, তবে এ দুটোর মধ্যে স্পষ্টতই একটি সূদৃঢ় সহসম্পর্ক আছে। প্রত্যাশিত সুস্থ জীবনের হার মৃদুহারে বেড়েছে। একজন গড়পড়তা ব্রিটিশ নারী তার জীবনের শেষ দশকের পুরোটা বা অর্ধেক ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে বাঁচার প্রত্যাশা করতে পারেন।

আপনি যদি ধনী হন বা আপনার কাজে যদি শারীরিক শ্রম কম থাকে, তাহলে শেষ জীবনে ভাগ্য আপনার প্রতি সুপ্রসন্ন হলেও হতে পারে। তারপরও একটা বিশাল সংখ্যক মানুষ তাদের অবসর জীবন পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে নানা শারীরিক অসুবিধায় ভুগবেন।

এতে করে স্বাস্থ্যসুখ থেকে বঞ্চিত যেমন হতে হবে, তেমনি তৈরি হবে আর্থিক চাপও।

অবসরের জন্য অনেকে অর্থ জমান, কিন্তু সে অর্থ অনেক আগেই ভেঙে ফেলতে হয়। তবে এরকম পরিস্থিতির জন্য আগে থেকে কিছু প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা যায়।

ভবিষ্যতে কোনো কিছু প্রয়োজন হবে বলে মনে হলে তা প্রয়োজনের সময়ের আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। অনেক অসুস্থতা মানুষের মনের ওপর প্রভাব ফেলে, তখন শেষ বয়সে এসে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সঠিকভাবে নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ব্যক্তির পক্ষে কাজ করার জন্য উপযুক্ত কাউকে আগে থেকে ঠিক করে রাখা উচিত। ব্রিটেনে এটাকে বলা হয় লাস্টিং পাওয়ার্স অব অ্যাটর্নি বা এলপিএ।

একধরনের এলপিএ শারীরিক বিষয়গুলো দেখাশোনা করে। আরেকধরনের এলপিএ আছে যারা সম্পত্তি ও আর্থিক বিষয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

বাচ্চাকাচ্চা থাকলে নিয়মিত উইলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা উচিত। প্রাথমিক উইলে যেমন নাবালক সন্তানদের দেখাশোনা করার দায়িত্বের বিষয় লেখা থাকতে পারে, শেষদিকের উইলে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের দায়দায়িত্বের কথা থাকতে পারে।

কোনো শারীরিক অক্ষমতা থাকলে সেক্ষেত্রে আর্থিকভাবে ছোটখাটো একটা সুবিধা পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো শারীরিক অসুবিধায় থাকা মানুষদের কিছুটা বেশি বার্ষিক আর্থিক সুবিধা (অ্যানুইটি) দেয়।

একজন সুস্থ মানুষের তুলনায় একজন স্ট্রোক বা হৃদরোগে ভোগা ব্যক্তি অনায়াসে ৭৫ শতাংশ বেশি অ্যানুইটি পেতে পারেন। এমনকি নিয়মিত ধূমপান করলে, মদপান করলে, বা শরীরের ভর বেশি থাকলেও অ্যানুইটি আয় বাড়ে।

তবে অ্যানুইটির খারাপ দিক হলো ব্যক্তির সন্তানেরা এর ফলে সাধারণ পরিস্থিতির তুলনায় কিছুটা কম সম্পদের উত্তরাধিকার লাভ করেন। তাই জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে অ্যানুইটি সুবিধা না কেনাই শ্রেয়।

তাহলে কি এতকিছু থেকে দূরে থাকতে আগেভাগে অবসরে যাওয়া উচিত? এ বিষয়ে পাওয়া উপাত্ত থেকে এ প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যায় না। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আগে অবসর গ্রহণ করাই শ্রেয়। আবার আরেকটি বিখ্যাত গবেষণা অনুযায়ী, যত বেশিদিন কাজ করা যায়, ততই ভালো।

অবসরজীবনে আর্থিক বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তা করলে তার ফলে আবার অবসর-পরবর্তী বিষণ্ণতারও সৃষ্টি হতে পারে। তাই বেশ আগে থেকেই অবসরজীবনের জন্য আর্থিক ও মানসিক উভয়দিকের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

আপনার চাকুরিতে যদি খাটনি বেশি হয়, কিন্তু আপনি যথেষ্ট অর্থ অর্জন করে ফেলেছেন, সেক্ষেত্রে দ্রুত অবসর গ্রহণ করা একটি সুস্থ বিকল্প। আর যা-ই হোক, কবরে তে আর সম্পত্তি নিয়ে যাওয়া যাবে না।

ব্লুমবার্গ অপিনিয়ন থেকে অনূদিত টিবিএস থেকে সংগ্রহ