অশিক্ষিত শব্দের ভিত্তি নেই, পৃথিবীতে সবাই শিক্ষিত!
‘অশিক্ষা’ এবং ‘কুশিক্ষা’-এর মধ্যে আপনি কোনটিকে বেশি খারাপ হিসেবে দেখবেন?
দুটোই চুড়ান্ত খারাপ এবং একে, অন্যের সাথে সম্পর্কিত।
অশিক্ষা বলতে, পুঁথিগত শিক্ষা না থাকার ব্যাপারটাকে বুঝাচ্ছি না।
পুঁথিগত শিক্ষা না থাকলেও, কেউ তাঁর জীবনে লব্ধ অভিজ্ঞতার নিরিখে স্বশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেন, পারিবারিক, পারিপার্শ্বিক শিক্ষার পরিবেশে শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেন। এক্ষেত্রে, তাঁকে অশিক্ষিত বলা যাবে না।
কিন্তু, কোনোভাবেই যদি তিনি শিক্ষিত না হন, সেটা কুশিক্ষার মতোই খারাপ।
কারণ, অশিক্ষা, কুশিক্ষার নেতিবাচক দিকটি বুঝার মতো যোগ্যতা তৈরী করতে সে ব্যর্থ।
কুশিক্ষার প্রভাবে প্রথমে নিজের পরিবারের মাঝে ভাংগনের সৃষ্টি হয় পরবর্তীতে তা সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা প্রায়ই বলে থাকি ওমুকে তার মেয়ে বা স্ত্রীকে ব্যবহার করে সমাজ সংসারে ফায়দা লুটতে চায়, কিন্তু শিক্ষিত শ্রেনী যখন নিজেদের মাঝে দ্বন্ধ ও টক্সিক রিলেশন তৈরি করে – দ্বায়িত্ব নেবার নামে বুদবুদ তৈরি করে তখন তা আমরা বাহবা দেই এই বলে যে- সে পরিবারের বাবা-মাকে দেখাশোনা ও তার সামাজিক সুরক্ষা করছে। এটাই আপাত দৃষ্টিতে অশিক্ষিত ও শিক্ষিত এর মাঝে তুলনা। দুটোই এক।
তবে অশিক্ষিত ও শিক্ষিত এর তুলনা একটি মিথ্যা অজুহাত। এ পৃথিবীতে সবাই শিক্ষিত, কেউ প্রতিষ্ঠানে, কেউ পেশায়। স্কুল কলেজের সার্টিফিকেটই শিক্ষার একমাত্র মাপকাঠি নই। জীবন, জীবিকা এবং পেশাগত দক্ষতার জন্য স্কুল কলেজের শিক্ষার প্রয়োজন আছে মানছি। কিন্তু তাই বলে যারা স্কুল কলেজে পড়েনি, তারা সব দিক থেকে অশিক্ষিত এটা বলা যাবে না। কয়েকটি বছর স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়ে এক গাদা কাগজের সাটিফিকেট ও কিছু ডিগ্রী হয়তো অর্জন করা যায়। কিন্তু এতে যে আমরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হব এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। সময়ের প্রয়োজনে আমরা বর্তমানে শিক্ষা গ্রহণ এবং ডিগ্রী অর্জন করছি। কিন্তু এতে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য খুব কম প্রতিফলিত হচ্ছে।
শিক্ষা এখন যার যার লাভ বা স্বার্থ চিন্তাকে বাস্তবায়নের একটি অবলম্বণে পরিণত হয়েছে। একজন যুবক বর্তমানে স্বপ্ন দেখে, সে ডাক্তার হয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জন করবে। একজন শিক্ষক চাইছেন, টিউশনি করে অনেক টাকা উপার্জন করতে। একজন ইন্জিনিয়ার স্বপ্ন দেখেন, হাজার হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে গাড়ী বাড়ী করবেন। এখানে সবার মুল উদ্দেশ্য জীবিকা নির্বাহ করা পরে, মানব সেবা। এখানে শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কিনা, তা সহজেই অনুমান করা যায়। এমন চিত্র তুলনা করলে অশিক্ষিত এবং শিক্ষিতের মধ্যে ঠিক কতটুকু পার্থক্য সহজেই বুঝতে পারবেন।
যা হোক, কেউ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সঠিক অবস্থানে থাকলো কিনা সেটা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে অশিক্ষিত শব্দের ভিত্তি নেই, পৃথিবীতে সবাই শিক্ষিত!
এক জন চাষী তার পূর্ব পুরুষের পেশা চাষ আবাদকে নিজের জীবিকা হিসেব বেছে নিলেন। তিনি তার বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কখন কোন ফসলের বীজ বপন করতে হবে। কখন সার, কীটনাশক, সেচ বা অন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দিতে হবে। কখন ফসল ঘরে তুলতে হবে তা নিজের ও পেশার প্রয়োজনে শিখেছেন। এখানে চাষাবাদের যে শিক্ষা তা কিন্তু তিনি অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করেছেন। অশিক্ষিত হয়েও তিনি পূর্ব পুরুষের শিক্ষা, প্রকৃতির শিক্ষা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তার পেশাতে শিক্ষিত। সুতরাং তার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষর জ্ঞান না থাকলেও তিনি তার পেশায় শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন।
একই ভাবে একজন কামার, কুমার, তাঁতী বা মুচি তাদের পেশার বিচারে শিক্ষিত, অশিক্ষিত নই। যা আমর সাধারণ মানুষ না শিখে, করে দেখাতে পারবো না। এসব ক্ষেত্রে তারা নিজ নিজ পেশায় অনুশীলন করেছেন ও অভিজ্ঞতার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। আবার বই পুস্তকের শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ব্যক্তি। যদি কারও প্রতি অন্যায় ও অমানবিক আচরণ করেন, তবে তার এ অনৈতিক আচরণ বর্বরতা হতে শেখা এক ধরনের নোংরা শিক্ষা – কু-শিক্ষা।
খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করুন। দেখবেন, জগতের প্রত্যেকেই কোন না কোন একটা বিশেষ বিষয়ে পারদর্শী। এ পারদর্শীতা এমনি এমনি আসেনি। তাকে সে বিষয়ে শিক্ষা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে এটা অর্জন করতে হয়েছে। সুতরাং কোন ব্যক্তি যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তিনি সেই বিষয়ে শিক্ষিত। কাজেই পৃথিবীতে সবাই শিক্ষিত, অশিক্ষিত নই। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে হেদায়েত দান করুন।