মনে রাখবেন, ক্ষমা করার অর্থ ভুলে যাওয়া নয়, তবে এটি নিরাময় এবং সুচিন্তা বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে।
আজ এমন একটি দিন, যে দিনটি হতে পারে অতীতকে ভুলে যাওয়ার, যে দিনটি হতে পারে ক্ষমার দিন। আজ ৮ সেপ্টেম্বর ক্ষমা দিবস।
ছোট্ট একটি ভুলের কারণে আমাদের সম্পর্কগুলো তিক্ত হয়ে ওঠে। তৈরি হয় বিদ্বেষ, ভেঙে যায় আনুগত্য। তাই ছোট্ট কোনো ভুলের জন্য কারো ওপর রাগ করে থাকা উচিত হয়। বরং তাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, ক্ষমা মহৎ গুণ, ক্ষমা সুন্দর- এ কথা মনীষীরা বলে গেছেন।
আজ এমন একটি দিন, যে দিনটি হতে পারে অতীতকে ভুলে যাওয়ার, যে দিনটি হতে পারে ক্ষমার দিন। আজ ৮ সেপ্টেম্বর ক্ষমা দিবস। যুক্তরাষ্ট্র দিবসটি উদযাপন করে থাকে। যেহেতু ক্ষমা মহৎ গুণ তাই চাইলে আমরাও দিবসটি পালন করতে পারি। আর একবার ক্ষমা করে দিলে তা হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সুখের চাবিকাঠি।
ক্ষমা সম্ভবত একজন মানুষের সবচেয়ে ইতিবাচক গুণ। আর এই গুণটি অর্জন করা কোনো কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়, শুধু দরকার একটুখানি স্বদিচ্ছা। পৃথিবীর সব ধর্মের অন্যতম প্রধান শিক্ষা এই ক্ষমা। সব ধর্মেই বলা হয়েছে মানুষকে ক্ষমা করার কথা।
‘ক্ষমা’ শব্দটির কিছু আইনি ব্যাখ্যাও আছে। যেমন কোনো দেশের উচ্চ আদালত অপরাধীকে ক্ষমা করার মানে হলো তাকে অপরাধের শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়া। আর এখান থেকেই মূলত ক্ষমা দিবসের উৎপত্তি। ১৯৭৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড আরেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যেই ক্ষমাকে অত্যন্ত বিতর্কিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। কারণ নিক্সন মার্কিন ইতিহাসের কলঙ্কজনক ঘটনা ওয়াটারগেটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সেখানে ক্ষমা দিবসের উৎপত্তি। তবে, যেভাবেই দিবসটির উৎপত্তি হোক না কেন, ক্ষমা সবসময়ই সুন্দর।
বর্তমান সমাজে মনের ক্ষোভের আগুন নিভানোর চেয়ে আগুনের উত্তাপ বৃদ্ধি করতে মরিয়া বেশি মানুষ। তাই মানুষের জীবন বিষাদময়, অধিক মানসিক চাপের ফলে উচ্চরক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে ভোগেন। পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কে অবনতি ঘটে, ঘুমের ব্যত্যয় ঘটায়।
কিন্তু মুমিনরা রাগ-ক্ষোভের বিষ নষ্ট করে, সুসম্পর্ক গড়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা করে। আর তারা জানে, ক্ষমা মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়, অন্তরে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ আর চোখে আনে প্রশান্তির ঘুম। শারীরিক সুস্থতা ও হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক গতি আনয়ন করে। আর আল্লাহতায়ালা মীমাংসাকারীদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।
অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না,’ (সূরা আশ-শুরা আয়াত : ৪০)।
ক্ষমা প্রদর্শন একটি স্বর্গীয় গুণ। কিন্তু আজকাল মানুষের মনে প্রতিহিংসার আধিপত্য এতটাই বেশি যে, ক্ষমা প্রদর্শনের ইচ্ছা অন্তর থেকে নির্বাসিত হয়ে গেছে। সব কিছুতে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ মানুষের চরিত্রকে কোথায় নামিয়েছে, চিন্তা করলেও আতঙ্কে গা ছমছম করে। প্রতিযোগিতা নয়, ক্ষমা আর সহযোগিতাই মুমিনের গুণ।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু,’ (সূরা তাগাবুন আয়াত : ১৪)।
যে সুযোগ নেই বলে মন্দ কাজে নিজে জড়ায় না আর যে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মন্দ কাজে নিজেকে জড়ায় না, তারা কখনোই সমান নয়। প্রতিশোধ গ্রহণের শক্তি ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা করা আর প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ না থাকায় ক্ষমা করা এক নয়। প্রকৃত আত্মতৃপ্তি সেই ক্ষমাকারী পায়, যিনি সুযোগ পেয়েও ক্ষমা করে। তবে এটা বড়ই হিম্মতের কাজ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে, তা নিশ্চয় দৃঢ় সংকল্পেরই কাজ,’ (সূরা আশ-শুরা আয়াত : ৪৩)।
জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ অন্যের রূঢ় বা কটু কথাবার্তা কিংবা অশোভনীয় আচার-আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকেন। ফলে একে অপরে মতবিরোধ তৈরি হয়। অনেক সময় মতবিরোধ ও মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে পরস্পরের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে আদেশ দিয়েছেন, যেন একে-অপরকে ক্ষমা করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ করো কিংবা গোপন করো অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১৪৯)
অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমাদের নিজেদের পাপ ও ভুলত্রুটির ক্ষমার জন্য আমরা যেমন আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রত্যাশা করি, তেমনি যারা আমাদের প্রতি অন্যায় করে থাকে, তাদের ক্ষমা করার অভ্যাস নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে অবশ্যই। এটাই ইসলামের শিক্ষা।