কী কারণে বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড? প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করুন – Ekush.Info

কী কারণে বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড?

জানুন প্রাকৃতিকভাবে কমানোর উপায়:

কী কারণে বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড?
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে শরীরে কী কী সমস্যা হয়?
কতটা মাত্রা ঠিকঠাক?

আধুনিক জীবনযাপনে চিন্তার কারণ হয়েছে দাঁড়িয়েছে ইউরিক অ্যাসিড। তার জেরে ভোগায় আর্থরাইটিস ব্যথা। শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের করে দেয় কিডনি। অক্ষম হলে তা জমা হয় কোষ ও গাঁটে। শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খাওয়া, অ্যালকোহল খেলে কিডনি ইউরিক অ্যাসিড সাফ করতে পারে না। ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে শরীরে কী কী সমস্যা হয়? কতটা মাত্রা ঠিকঠাক?

ইউরিক অ্যাসিড আদতে প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থ যা পরিপাকের পর উচ্ছিষ্ট অংশ। পিউরিন যুক্ত জিনিস খেলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। যে সব খাবারে পিউরিন বেশি পাওয়া যায়-

– সার্ডিন মাছ
– শুকনো মটরশুটি
– বিয়ার
– শুয়োরের মাংস
– মাছ
– সেদ্ধ আলু
– ভেড়ার মাংস
– ফুলকপি
– বাঁধাকপি
– সবুজ মটর
– মাশরুম

সাধারণত কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড ফিল্টার করে। খাবারে প্রচুর পরিমাণে পিউরিন থাকলে রক্তে তার পরিমাণ বাড়তে পারে। নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অত্যাধিক পিউরিন হাইপারইউরিসেমিয়া নামে পরিচিত। এর ফলে আর্থারাইটিস হতে পারে। ফলে গাঁটে গাঁটে ব্যথা হয়। এই অসুখে ইউরেট স্ফটিক জমা হয় শরীরে। যা রক্ত ​​ও প্রস্রাবকে অম্লীয় করে তোলে। শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমা হওয়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে। যেমন-

– ডায়েট
– জেনেটিক্স
– স্থূলতা
– অতিরিক্ত চিন্তা
– কিডনির অসুখ
– হাইপোথাইরয়েডিজম
– নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার বা কেমোথেরাপি
– সোরিয়াসিস

পুরুষদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা

নিম্ন- ২.৫ mg/dl-এর কম
স্বাভাবিক-২.৫–৭ mg/dl
অত্য়াধিক- ৭ mg/dl-এর বেশি

মহিলাদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা

নিম্ন- ১.৫ mg/dl-এর কম
স্বাভাবিক- ১.৫–৬.০ mg/dl
অত্যাধিক- ৬.০ mg/dl-এর বেশি

ইউরিক অ্যাসিডে শারীরিক সমস্যা

শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। গাঁটের বাতে শরীরের গাঁটগুলিতে ব্যথা হয়। কারণ জয়েন্ট এবং কোষে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। সাধারণত পায়ের আঙুল, গোড়ালি এবং হাঁটু জয়েন্টকে প্রভাবিত করে।

ক্যান্সারের চিকিৎসা

কেমোথেরাপির মতো ক্যান্সারের চিকিৎসায় শরীরের কোষগুলো মৃত হয়ে যায়। কোষ মারা গেলে তারা পিউরিন নিঃসরণ করে। তার পর যখন শরীর সেগুলি ভেঙে দেয় তখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে মিশে যায়। যাঁরা ক্যান্সারের চিকিৎসা করাচ্ছেন তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।

কিডনির সমস্যা

কিডনি ইউরিক অ্যাসিডের পাশাপাশি রক্ত ​​থেকে অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে। কিডনির সমস্যা হলে তা হয় না। ফলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড জমতে থাকে।

ফ্যাঙ্কোনি সিনড্রোম

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কম থাকা খুবই বিরল। ফ্যানকোনি সিন্ড্রোম ইউরিক অ্যাসিডের কম মাত্রার কারণে হয়। এটি একটি বিরল কিডনির অসুখ।
ফ্যানকোনি সিনড্রোমে এনার্জির অভাব, ডিহাইড্রেশন এবং হাড়ের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কী ভাবে ইউরিক এসিডের পরিমাণ কমাতে হয়

ইউরিক এসিড বাড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাস। খাদ্যতালিকায় সুষম খাবার থাকলে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। পিউরিন-সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে। এই খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে কয়েকটি আমিষ পদ, সামুদ্রিক খাবার এবং শাকসবজি। এই খাবারগুলির অত্যধিক খাওয়া এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

মিষ্টি কম খান-

সাধারণত প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে শরীরে বাড়ে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা। তবে কয়েকটি গবেষণা দাবি করেছে, অতিরিক্ত মিষ্টি হলেও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়তে পারে। প্রসেসড খাবারে চিনি ফ্রুকটোজ হিসেবে থাকে। ফলে প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন।

জল খাওয়া

বেশি জল খেলে কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড বের করে দেয়। এজন্য ১-২ ঘণ্টা অন্তর জল খেতে থাকুন।

মদ একেবারে নয়

মদ খেলে ডিহাইড্রেট হতে পারে শরীর। বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা।

ওজন কমান

অত্যাধিক ওজনের কারণে বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

ফাইবারজাতীয় খাবার খান

ফাইবারজাতীয় খাবার শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এজন্য ফাইবার খান বেশি করে। ড্রাইফ্রুট, সবুজ শাক-সবজি ও ওটস খান।

সূত্রঃ আজতক কলকাতা