ডায়াবিটিস চিন্তা বাড়াচ্ছে? দুধের সঙ্গে কী মিশিয়ে খেলে কমবে রোগের ঝুঁকি
দুধ খাওয়ার অভ্যাস আছে কি? না থাকলে এখনই শুরু করুন। ডায়াবিটিসকে বাগে রাখতে চাইলে এই অভ্যাস দারুণ স্বাস্থ্যকর।
ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়াবিটিস রোগ। কারও বেশি বয়সে হয়, তো কারও বা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে খুব অল্প বয়স থেকেই। এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধলেই অনেক বিধিনিষেধ চলে আসে খাওয়াদাওয়ায়। এই অসুখের হাত ধরে শরীরে আসে একাধিক সমস্যা। তাই রক্তে শর্রকার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ভীষণ জরুরি। ওষুধ তো আছেই, সঙ্গে রোজের জীবনে কয়েকটি অভ্যাস সাহায্য করতে পারে শরীর সুস্থ রাখতে।
দুধ খাওয়ার অভ্যাস আছে কি? না থাকলে এখনই শুরু করুন। দুধে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে, আছে প্রোটিন। তারই সঙ্গে রয়েছে নানা রকমের ভিটামিন এবং ক্যালশিয়াম। এই সব উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জরুরি। এমন বেশ কিছু উপাদান আছে আমাদের হেঁশেলে যেগুলি দুধের সঙ্গে যদি মিশিয়ে খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তে শর্করার মাত্রা। জেনে নিন সেগুলি কী।
১) রক্ত শর্করার মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম দারচিনি। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। দুধের সঙ্গে যদি নিয়মিত দারচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়া যায়, তা হলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটাই বাগে থাকবে।
২) হলুদ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ডায়াবিটিস জব্দ করতেও এটি খুব কাজের বলে মনে করা হয়। দুধের সঙ্গে যদি হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যায়, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। এই পানীয় খেলে ডায়াবিটিস সংক্রান্ত নানা শারীরিক সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।
৩) দুধের সঙ্গে বাদামবাটা মিশিয়ে খেলেও শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপাদান পৌঁছবে। প্রোটিন, ফাইবার থেকে ক্যালশিয়াম— একসঙ্গে সব কিছু পাবে শরীর। নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়াবিটিস। রোজের ডায়েটে আমন্ড বা সোয়া দুধ রাখলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।
এক গ্লাস হলুদ দুধে এত উপকারিতা!
দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার মেলে একথা সবারই জানা। যদি আপনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে চান তবে হলুদের দুধের বিকল্প কিছু হতে পারে না। কিন্তু জানেন কি এক গ্লাস হলুদমিশ্রিত গরম দুধ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর, সর্দি-কাশি, ফ্লু, ক্ষত, ব্যথা থেকে শুরু করে, অন্যান্য অনেক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে হলুদ দুধ অত্যন্ত কার্যকর। তাহলে জেনে নিন হলুদ দুধের উপকারিতা সম্পর্কে।
ব্যথা কমাতে দুর্দান্ত
হলুদে রয়েছে কারকিউমিন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কারকিউমিন প্রদাহ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। হলুদ দুধ ফোলাভাব কিংবা ব্যথা কমাতে দুর্দান্ত কার্যকর।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে
হলুদ দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে দুর্দান্ত সহায়ক। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য, শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সর্দি-কাশি ও ফ্লু থেকে বাঁচতে অনেক ডাক্তার প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধে এক চা চামচ হলুদ মেশানোর পরামর্শ দেন।
কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই
হলুদ দুধ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি পানীয়। হলুদে কারকিউমিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বর্তমান। তাছাড়া দুধও শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি কোষের যে কোনো ধরনের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতেও সহায়তা করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি
হলুদ দুধ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত সহায়ক। এটি লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম এবং রক্তনালী পরিষ্কার করে। তাই, হলুদ দুধ রক্ত পরিশোধক হিসেবেও কাজ করে।
হজমের সমস্যা দূর করে
হলুদের দুধে আন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য বর্তমান, যা বিভিন্ন ধরনের হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন, ডায়রিয়া এবং পেটের আলসারের মতো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে হলুদ দুধ অত্যন্ত কার্যকরী।
প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করে
হলুদের দুধে অ্যান্টি-স্প্যাসমোডিক বৈশিষ্ট্যও বর্তমান, যা মাসিক চক্রের সময় হওয়া ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। এটি মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সহায়ক। নারীদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, এন্ডোমেট্রিওসিস, লিউকোরিয়া অথবা ফাইব্রয়েডের সমস্যা দূর করতে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে, হলুদ দুধ দুর্দান্ত কার্যকর।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদে থাকা কারকিউমিন ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। হলুদ দুধ ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন পান করলে, এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করতেও সহায়তা করে।
যেভাবে তৈরি করবেন: হলুদ দুধে ব্যবহৃত দুধ এবং হলুদ, উভয় উপাদানই স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারি। হলুদ দুধ তৈরি করতে, এক গ্লাস দুধ ভালো করে ফুটিয়ে তাতে এক চা চামচ হলুদ মিশিয়ে নিন। স্বাদ বাড়াতে আপনি এতে চিনি, কেশর, ড্রাই ফ্রুটসও মিশিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া, আদা ও দারুচিনিও মিশিয়ে নিতে পারেন।
বিকেলে বা সন্ধ্যায় এই হলুদ দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়। চার সপ্তাহ টানা খেলে তবেই হাতেনাতে ফল মিলবে। তবে যে কোনো সমস্যা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। আপনার শারীরিক পরিস্থিতির বিষয়ে অবগত হয়ে তবেই এই ঘরোয়া প্রতিকার কাজে লাগান।