“আমরা অনুমোদন দিয়েছি- নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট”-অর্থমন্ত্রী – Ekush.Info

বন্ধ করি করি করেও করা হচ্ছে না দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো, এই দফায় মেয়াদ বাড়ল আরও পাঁচটির।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পাঁচটি দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরও দুই বছর বিদ্যুৎ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়।

এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৬ টাকা ৪০ পয়সায় কেনা হবে। এতদিন কেনা হচ্ছিল ১৭ টাকা ৫৩ পয়সায়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোর চেষ্টায় ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়।

বেসরকারি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার জন্য সরকারকে অনেক টাকা ভর্তুকি দিতে হয় বলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।

সরকারি সংস্থা পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পাইকারি বিদ্যুতের দাম এখন সর্বনিম্ন ৪ টাকা ৩২ পয়সা (পল্লী বিদ্যুৎ ১৩২ কেভি) থেকে সর্বোচ্চ ৫ টাকা ৯০ পয়সা (পিডিবি ৩৩ কেভি)। আর গড় উৎপাদন ব্যয় তার চেয়ে একটু বেশি হওয়ায় সরকার কিছু ভর্তুকি দিয়ে থাকে।

এখন দেশে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় ছোট এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে চড়া দামে কেন কেনা হচ্ছে, সাংবাদিকদের সে প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, “সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।

“তবে এখানে বিদ্যুৎ না নিলে কোনো অর্থ পরিশোধ করা হবে না। অর্থাৎ নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট।”

দেশে চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরেও নতুন করে কেন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে?

সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টে আগের অনুমোদন নির্ধারিত সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছিল, তখন ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল। এটা না করলে কেউ ইনভেস্ট করত না।

“এখনও আমাদের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ হয়নি। যখন হবে তখন আস্তে আস্তে এগুলো বন্ধ করা হবে। তারা চেয়েছিল পাঁচ বছরের এক্সটেনশন, আমরা দুই বছরের দিয়েছি। আশা করি এই দুই বছরের মধ্যে আমরা নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।”

এখন আগের মতো অলস বসে থাকলেও অর্থ দেওয়া হবে না জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা অনুমোদন দিয়েছি- নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট। এখানে কোনো দুঃশ্চিন্তার কারণ নেই। আমাকে কোট করতে পারেন, বিদ্যুৎ না নিলে টাকা দিতে হবে না।”

মেয়াদ বাড়লো যেগুলোর

>> যশোরের নওয়াপাড়ায় খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোম্পানিটিকে ২ বছরে ৪৫৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা দিতে হতে পারে।

>> খুলনার গোয়ালপাড়ায় খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোম্পানিটিকে ১২৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা দিতে হতে হবে।

>> নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোম্পানিটিকে ১১৪৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা দিতে হতে পারে।

>> নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেডের ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র।  কোম্পানিটিকে ১১৪৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা দিতে হতে পারে।

>> নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ারের ১০২ মেগাওয়াট ক্ষমতার এইচএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র।  কোম্পানিকে ১১৫৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা দিতে হতে পারে।

অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান জানান, গত পাঁচ বছর ধরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হত ১৭ দশমিক ৫৩ টাকা। এখন কেনা হবে প্রতি ইউনিট ১৬ দশমিক ৪০ টাকায়। এবার কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হবে না।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের যাতে লোকসান না হয়, সে জন্য অন্যান্য ব্যয়ের সঙ্গে বিনিয়োগ করা অর্থ হিসাব করে একটি নির্দিষ্ট হারে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও উদ্যোক্তারা এ অর্থ পান। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মেয়াদ কম থাকে বলে ক্যাপাসিটি চার্জও হয় বেশি।