ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রথম তিন মাস
বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পণ্যের মূল্য। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই এ পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।
এ অবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। জাতিসংঘের নতুন একটি প্রতিবেদন অনুসারে, খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চমূল্য বিশ্বজুড়ে আরো ৭ কোটি ১৬ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। খবর এপি।
গতকাল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম তিন মাসে নতুন করে ৫ কোটি ১৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছিল। তারা দৈনিক ১ ডলার ৯০ সেন্ট বা তার কম অর্থে জীবনযাপন করে। এটি বিশ্বের জনসংখ্যার ৯ শতাংশ। পাশাপাশি আরো ২ কোটি মানুষ দৈনিক ৩ ডলার ২০ সেন্টে জীবনযাপন করছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার বিস্তৃত খাতজুড়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। এরপরে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্য সরববাহে অনিশ্চয়তায় ক্রমবর্ধমান রয়েছে মূল্য। গম, চিনি ও রান্নার তেলসহ জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ অবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশের পরিবারগুলো তাদের পারিবারিক আয়ের ৪২ শতাংশই খাদ্যের পেছনে ব্যয় করছে। ইউক্রেনে অবরুদ্ধ বন্দর নিম্ন-আয়ের দেশগুলোয় শস্য রফতানি স্থবির করে দিয়েছে। ফলে দাম আরো বেড়ে গিয়েছে। এ পরিস্থিতি লাখ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ইউএনডিপির প্রশাসক আখিম স্টেইনার বলেন, চলমান সংকট মানুষের জীবনযাত্রায় নজিরবিহীন প্রভাব ফেলেছে। সে কারণেই বর্তমান পরিস্থিতি অনেক বেশি গুরুতর। তাছাড়া যে গতিতে লাখ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে তা মহামারীর ভয়াবহ অর্থনৈতিক প্রভাবকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।
ইউএনডিপি উল্লেখ করেছে, কভিডজনিত লকডাউনের সময় প্রায় ১৮ মাসে ১২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়েছিল। অথচ ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর প্রথম তিন মাসেই ৭ কোটি ১০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যে পড়েছে।
প্রতিবেদনটি সঙ্গে যুক্ত থাকা ইউএনডিপির প্রধান অর্থনীতিবিদ জর্জ মোলিনা বলেন, ইউক্রেন সংকটের পর মানুষের দারিদ্র্যে পড়ার হার খুব দ্রুত। মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে হাইতি, আর্জেন্টিনা, মিসর, ইরাক, তুরস্ক, ফিলিপাইন, রুয়ান্ডা, সুদান, কেনিয়া, শ্রীলংকা ও উজবেকিস্তান। এছাড়া এরই মধ্যে দারিদ্র্যসীমায় থাকা আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, মালি, নাইজেরিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতির প্রভাব আরো ভয়াবহ।
সব মিলিয়ে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা কিংবা দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের মোট সংখ্যা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ২৩০ কোটি মানুষ পর্যাপ্ত খাবারের জন্য মাঝারি বা গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। যদিও এ পরিসংখ্যান ইউক্রেন যুদ্ধের আগের।
ইউএনডিপির আখিম স্টেইনার বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সংকট মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদও রয়েছে। তবে আমাদের ঐক্যবদ্ধতা ও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ।
ইউএনডিপি সুপারিশ করেছে, জ্বালানি খাতে লাখ লাখ ডলার ভর্তুকি দেয়ার পরিবর্তে সরকারগুলো দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা লোকদের নগদ সহায়তা দিতে পারে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে ৫ কোটি ২৬ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ধনী দেশগুলোর প্রতি নগদ অর্থ সংকট এবং ঋণে জর্জরিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
আখিম স্টেইনার বলেন, এটি কেবল একটি দাতব্য কাজ নয় বরং বহুমুখী বৈশ্বিক সংকট এড়াতে নিজ স্বার্থের জন্যই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।