বাঁচতে হবে হাত ধরাধরি করে: বিশ্বনেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা – Ekush.Info

সংঘাত নয়, পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে একে অন্যের হাত ধরে এগিয়ে যেতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ শনিবার ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনের ‘এক বিশ্ব’ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশার কথাও উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু জীবনধারণের অধিকার সবার আছে। মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুতদের ফেরত যাওয়ার বিষয়টি বিশ্বের ভুলে গেলে চলবে না। তাঁদের জন্য মানবিক সহায়তাও জারি থাকা জরুরি।’

নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে ‘ভারত মণ্ডপমে’ এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি, করোনা–পরবর্তী বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং নানা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব চ্যালেঞ্জ আমাদের বাধ্য করছে এক বিশ্ব ও সমাজ আঁকড়ে ধরতে, যাতে শান্তি ও প্রগতির পাশাপাশি মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকে।’  

বৈশ্বিক নেতৃত্বের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবী ও মানুষের সহাবস্থানের জন্য জরুরি এমন এক বৈশ্বিক আবহ, যা দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করবে। সেই সঙ্গে বিশ্বে সংঘাতের বদলে সহযোগিতার বাতাবরণ সৃষ্টি করবে।’ ভারতের সভাপতিত্বে এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্যও তা–ই, ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ।’

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রযুক্তি হস্তান্তরে অর্থায়ন হওয়া একান্তভাবে দরকার বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা কিঞ্চিৎ। কিন্তু এর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে অনেক বেশি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ যেসব পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, সেগুলো তুলে ধরেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে গৃহীত ‘লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট’ আন্দোলনের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া পৃথিবী ও মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও এটা উল্লেখ রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ গৃহহারা হবেন।’

শেখ হাসিনা জানান, তাঁর সরকার চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৮ লাখ ৪০ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বিনা খরচে জমি ও বাড়ি দিয়েছে। দেশের একজন মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে, তা নিশ্চিত করা তাঁর সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

জি–২০–এর সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারত এবারের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে বারবার ‘বিশ্বস্ত বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য প্রতিবেশী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

গতকাল শুক্রবার নিজের সরকারি বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময়েও পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তির কথা উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, গত ৯ বছরে দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতি সন্তোষজনক। মোদি এবারের জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে ৯টি দেশকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র।  

শেখ হাসিনার চার সুপারিশ

সহাবস্থানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারটি সুপারিশ করেন। প্রথমত, বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে সুসংহত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সেই লক্ষ্যে জি–২০ ও আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থাগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, মানবকল্যাণের স্বার্থে পুরো বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। সে জন্য দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণ প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গৃহহীন দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য অর্থায়ন তহবিল দ্রুত কার্যকর করা। চতুর্থত, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুতদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিশ্বের ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুতদের জন্য মানবিক অনুদান অব্যাহত রাখা।

জো বাইডেনের সেলফিতে শেখ হাসিনা
ভারতের নয়াদিল্লিতে শুরু হয়েছে বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলন। আজ শনিবার সেখানে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের সাক্ষাৎ হয়েছে। আলাপচারিতার পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদকে নিয়ে সেলফি তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

অনুষ্ঠানের আরও কয়েকটি ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে চমৎকার গল্প হয়েছে। সম্প্রসারিত জনস্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব নিয়ে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। একই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুল সাইকোলজিস্টদের ভূমিকার গুরুত্ব নিয়েও কথা হয়েছে।’

সায়মা ওয়াজেদ ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল মনস্তত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি অর্জন করেন।

সায়মা ওয়াজেদ ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ করছেন। তিনি ২০১১ সালে ঢাকায় অটিজমবিষয়ক প্রথম দক্ষিণ এশীয় সম্মেলন আয়োজন করেন। ২০১৩ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। যার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪ সালে ডব্লিউএইচও অ্যাক্সিলেন্স পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।