২৬ এপ্রিল ২০২৫ , ৫:১২:০২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানের নাগরিকত্ব অর্জনের প্রধান উদ্দেশ্যে ট্যুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করে সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টাকে কঠোরভাবে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। এই চর্চা, যা ‘জন্ম পর্যটন’ নামে পরিচিত, তার বিরুদ্ধে তীব্র হুঁশিয়ারি জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, এমন উদ্দেশ্য নিয়ে যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসবেন, তাদের ভিসা বাতিল করা হবে এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিদেশী অভিভাবকদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানের নাগরিকত্ব অর্জনের প্রধান উদ্দেশ্যে ট্যুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করা অগ্রহণযোগ্য। এর ফলে মার্কিন করদাতাদের চিকিৎসা ব্যয়ের ভার বহন করতে হতে পারে। এটি ‘জন্ম পর্যটন’ নামে পরিচিত এবং মার্কিন কনস্যুলার কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন অনুযায়ী এই ধরনের সমস্ত ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।
বিবৃতিতে আরও কঠোর বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, যারা জন্ম পর্যটনের মাধ্যমে আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার করেন, তারা ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বা ভ্রমণের জন্য অযোগ্য হতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর আমেরিকান করদাতা এবং সম্প্রদায়কে সেবা ও সুরক্ষার জন্য এটি আরেকটি পদক্ষেপ।
মার্কিন সরকারের এই কঠোর অবস্থান জন্ম পর্যটনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেক বিদেশি নাগরিক, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো থেকে, তাদের সন্তানদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং এখানে সন্তান প্রসব করেন। মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী যে কোনও শিশুই জন্মসূত্রে দেশটির নাগরিকত্ব লাভ করে। এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি ও পরিবার ‘জন্ম পর্যটন’-এর মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করার চেষ্টা করে থাকেন।
তবে, মার্কিন সরকার এখন এই ধরনের কার্যকলাপকে ভিসার শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করছে এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কনস্যুলার অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদি কোনো ভিসার আবেদনকারীর যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য আছে বলে সন্দেহ হয়, তাহলে যেন তাদের ভিসা আবেদন সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, যারা ইতিমধ্যেই ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং সন্তানের নাগরিকত্বের জন্য এখানে সন্তান প্রসব করেছেন, তাদের ভিসাও বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন সরকারের এই নতুন নীতি জন্ম পর্যটনের ব্যবসায় জড়িত দালাল এবং হাসপাতালগুলোর ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র বিভিন্ন দেশের ধনী পরিবারগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করে আসছে। এক্ষেত্রে তারা উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। তবে, এখন মার্কিন সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এই ধরনের কার্যকলাপ কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, জন্ম পর্যটনের কারণে দেশটির স্বাস্থ্যখাতেও একটি বড় ধরনের আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়। অনেক সময় বিদেশি নাগরিকরা ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর চিকিৎসার বিপুল পরিমাণ বিল পরিশোধ না করেই চলে যান, যার ফলস্বরূপ সেই আর্থিক বোঝা মার্কিন করদাতাদের ওপর বর্তায়। এই ধরনের অপচয় রোধ করাও সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
এই নতুন নীতির ফলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদনকারীদের আরও কঠোর নিরাপত্তার মুখোমুখি হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কনস্যুলার কর্মকর্তারা আবেদনকারীদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইতে পারেন এবং যদি তাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে বলে সামান্যতম সন্দেহও হয়, তবে ভিসা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার তাদের থাকবে।