সজনে পাতার যত গুণাগুণ – Ekush.Info

‘আসলে সজনে পাতাকে এখন বলা হচ্ছে অলৌকিক পাতা। বিজ্ঞানীরা সজনে পাতাকে বলছেন অলৌকিক পাতা। কেন? এত কিছু থাকতে সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা বলা হচ্ছে কেন? সজনে পাতার যে ফুড ভ্যালু (খাদ্যমান), এর নিউট্রিশন (পুষ্টি), এর কনটেন্ট যেকোনো মানুষকে বিস্মিত করবে। সে কারণেই বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন যে, এ সময়ের একটি অলৌকিক পাতা হচ্ছে সজনে পাতা।’

কী আছে সজনে পাতায়

সজনে পাতায় আমিষ আছে ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ এক কেজি সজনে পাতা যদি আপনি খান, তাহলে এর ২৭ শতাংশ, মানে কত? ২৭০ গ্রাম হচ্ছে আমিষ। ৩৮ শতাংশ হচ্ছে শর্করা (কার্বোহাইড্রেট)। ২ শতাংশ হচ্ছে ফ্যাট। ১৯ শতাংশ হচ্ছে ফাইবার বা আঁশ।

আমরা জানি যে, এখন ফাইবার বা আঁশকে খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আঁশ কোনো ঐচ্ছিক খাবার নয় যে, ইচ্ছা হলে খেলাম; ইচ্ছা না হলে খেলাম না।

ইট ইজ অ্যা ম্যান্ডাটোরি কম্পোনেন্ট (এটা আবশ্যিক উপাদান)। প্রত্যেক দিন আপনার খাদ্যতালিকায় যেন পর্যাপ্ত আঁশ থাকে এবং সেই সজনে পাতায় আঁশ আছে ১৯ শতাংশ।

সজনে পাতার শাক ও ভর্তা খাননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। তবে সজনে পাতার গুঁড়ো দিয়ে চা, এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগ-বালাইয়ের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এই চায়ের আছে নানা গুণ।

এতে আছে ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়ার বিশেষ ক্ষমতা। বিশেষ করে ঠাণ্ডা লেগে বুক-গলায় সংক্রমণ হলে এই চা খেলে উপকার পেতে পারেন। তা ছাড়া, নানা ধরনের পুষ্টিগুণেও ভরপুর সজনে পাতা। এতে ভিটামিন এ, বি ১, বি২, বি৩ এবং সি রয়েছে। আছে ক্যালশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়ামও। জেনে নিন, নিয়মিত এই চা খেলে শরীরের কী কী লাভ হয়? অ্যামাইনো অ্যাসিডের উৎস , দুধের প্রায় সমান পুষ্টি , ঔষধি গুণ সহ অনেক গুনাগুন আছে এই সজনে পাতায়।

ক্যানসার প্রতিরোধে: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সজনে চায়ের মধ্যে ক্যানসার প্রতিরোধের গুণ রয়েছে। পাকস্থলীর ক্যানসার, লিভার ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা রয়েছে এই চায়ের।

লিভারের যত্নে: অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, দেদার মদ্যপান, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়মের কারণে অল্প বয়সেই লিভারের অসুখ বাসা বাঁধছে শরীরে। সজনে পাতায় ভাল মাত্রায় পলিফেনল থাকে, যা যকৃতকে যে কোনও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

গ্যাস অম্বলের সমস্যা কমাতে: সারা বছর গ্যাস অম্বলে ভোগেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও রোজ সকালে সজনে চায়ে চুমুক দিতে পারেন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। সজনে পাতায় ভাল মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে। রোজ নিয়ম করে সজনে চায়ে চুমুক দিলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ফলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও কমবে। রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে এই চা।

চোখ ভাল রাখতে: বয়স বাড়লে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, তা ছাড়া সারাক্ষণ মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে অল্প বয়সেই চোখের বারোটা বাজছে। সজনে পাতায় ভিটামিন এ ভাল মাত্রায় থাকে। চোখ ভাল রাখতেও নিয়মিত সজনে চায়ে চুমুক দিতে পারেন।

সজনে পাতা কীভাবে খাবেন

আমরা মনে করি যে, ফুল সিজনে সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে এটিকে আপনি জুস করে খাবেন। কিছু সজনে পাতা নিন। ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে এটাকে ব্লেন্ডারে নিন। কিছু পানি যোগ করে টেস্টের জন্য কিছু আদা, কিছু জিরা, একটু বিট লবণ দিতে পারেন। ভালো করে ব্লেন্ড করেন। এরপর ছেঁকে নিন। ছেঁকে নিয়ে খাওয়ার সময় একটু মধু দিয়ে খেয়ে নিন। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জুসটি আপনার খাওয়া হয়ে গেল।

যদি আপনার জুস বানাতে ঝামেলা হয় অথবা সব দিন যদি জুস খেতে না পারেন, ভর্তা খান, তবে এটা কাঁচা হলে বেস্ট। যখন আপনি সিদ্ধ করলেন, এই যে নানাবিধ যে উপাদানগুলো আছে, এটি নষ্ট হয়ে যেতে থাকবে। সে জন্য কাঁচা পাতা ভালো করে বেটে নিয়ে এটাকে টেস্টি করার জন্য যা যা লাগে…সেখানে আপনি রসুন দেন, আদা দেন, মরিচ দেন, পেঁয়াজ দেন, যা যা দিলে টেস্টি হয়, দেন। তারপর আপনি খান। সিজনে।

অফ সিজনে গুঁড়া। সজনে পাতাকে আপনি সিজনে ভালো করে রোদে শুকান। শুকানোর পর এটাকে ক্রাশ করে ফেলেন। ছয় মাস এটা চমৎকার থাকবে এবং এক থেকে দুই চা চামচ সজনে পাতা যথেষ্ট আপনার পুষ্টির জন্য। তাই আমরা বলব যে, নিজের দেশের এই অ্যাভেইলেবল এই পাতাটিকে অবহেলা করবেন না।

আজ না হলে কাল থেকে শুরু করুন। অফ সিজনে আপনি গুঁড়ো সংগ্রহ করুন। প্রতিদিন এক চামচ সকালে, এক চামচ রাত্রে। ছয় মাস পর আপনি আপনার স্ট্রেংথ, আপনার কর্মক্ষমতা দেখে নিজেই বিস্মিত হবেন।