মোট ১৭৩ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার চারটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ৫ বছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার।
তবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘স্ট্যান্ডবাই’ থাকবে। অর্থাৎ যখন প্রয়োজন হবে, তখনই সরকার এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনবে।
নতুন মেয়াদে বিদ্যুতের ক্রয়মূল্যও আগের চেয়ে কমবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পুরোনো চারটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
যে চার কেন্দ্রর মেয়াদ বেড়েছে, তার মধ্যে সিলেটের কুমারগাঁওয়ের ৫০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ এক বছর, ফেঞ্চুগঞ্জের ৫০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ তিন বছর, বগুড়ার ২০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ তিন বছর এবং আশুগঞ্জ ৫৩ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানো হয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম তিনটি বিদুৎকেন্দ্র হোসাফ গ্রুপের। আর অন্যটি ইউনাইটেড গ্রুপের।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনে বিদ্যুৎ কিনলে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর যখন বিদ্যুৎ নেওয়া হবে না তখন অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখলে অর্থ দিতে হবে না। রেন্টালগুলো ‘নো ইলেক্ট্রেসিটি নো পেমেন্ট’ সিস্টেমে চলবে।”
এসব বিদ্যুতকেন্দ্রের মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্যাপিটাল কস্ট তারা অনেক আগেই তুলে নিয়েছে। এই মুহূর্তে তারা কোনোরকমভাবে এক বছর কিংবা পাঁচ বছর ধরে চললে কোনো বাড়তি চার্জ দিতে হবে না। শুধু যে পরিমাণ কিনব, সে পরিমাণ চার্জ দিতে হবে। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই।”
২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ সঙ্কট দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বৈধতা দিতে ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’। শুরুতে দুই বছরের জন্য এ আইন করা হলেও পরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়।
সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে ওই আইনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়াতে সংসদে বিল পাস হয়।
তবে এসব কেন্দ্র থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে অনেক টাকা ভর্তুকি দিতে হয় বলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে গত মার্চে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। তবে পরে সরকার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
বিদ্যুৎ কেনার খরচ কমল
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন জানান, যেসব রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বেড়েছে, সেগুলো থেকে বিদ্যুতের দামও কমে গেছে। তাতে সরকারের লাভ হবে।
সিলেটের কুমারগাঁওয়ে এনার্জি প্রাইমা লিমিটেডের ৫০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ সর্বশেষ যে দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল (২০১৮-২০২০২), তখন ওই কেন্দ্রের প্রতি ইউনিটের দাম ছিল ৩ দশমিক ২৭ সেন্ট বা ২ দশমিক ৬২ টাকা। সেটা এখন প্রতি ইউনিট কমে ২ দশমিক ৪৭ সেন্ট বা ১ টাকা ৯৭ পয়সা হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এক বছর।
ফেঞ্চুগঞ্জে এনার্জি প্রাইমা লিমিটেডের ৫০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুতের সর্বশেষ দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৩ দশমিক ৪৮ সেন্ট বা ২ দশমিক ৭৮ টাকা। সেটা এখন কমে হয়েছে প্রতি ইউনিট ২ দশমিক ৬৫ সেন্ট বা ২ টাকা ১২ পয়সা। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো হয়েছে।
বগুড়ায় এনার্জি প্রাইমার ২০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ তিন বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এতোদিন এই কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৩ দশমিক ১৪ সেন্ট বা ২ টাকা ৫১ পয়সা। এখন দাম হবে প্রতি ইউনিট ২ দশমিক ৫৪ সেন্ট বা ২ টাকা ০৪ পয়সা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তিন বছর।
আশুগঞ্জে ইউনাইটেড এনার্জির ৫৩ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম এতদিন ছিল প্রতি ইউনিট ৪ দশমিক ১১ সেন্ট বা ৩ টাকা ২৮ পয়সা। এখন নতুন দাম হবে প্রতি ইউনিট ৩ দশমিক ০৪ সেন্ট বা ২ টাকা ৪৩ পয়সা। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বেড়েছে পাঁচ বছর।
মিরসরাইয়ে নতুন কেন্দ্র
এদিন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস বা আরএলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চারটি কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়ামকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন।
২২ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ হাজার ১৫২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস, জিই কেপিটাল ইউএস হোল্ডিংস, কনফিডেন্স পাওয়ার এবং ইলেকট্রোপ্যাক মিলিতভাবে এই কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে।
এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হবে ৩ দশমিক ৬৭৯ সেন্ট বা ২ টাকা ৯৪৩ পয়সায়।