৪৭% বেড়েছে চিকিৎসা ব্যয়
প্রতীক ইজাজ | দেশ রূপান্তর
– ব্যক্তি খাতে চিকিৎসায় ব্যয় বেড়েছে ৪৭ শতাংশ
– ওষুধের দাম বেড়েছে ৫৪%
– থাকা-খাওয়ায় বেড়েছে ৬৪%
– যাতায়াতে ব্যয় বেড়েছে ৪৬%
– অ্যাম্বুলেন্সে ও লাশবাহী গাড়িতে বেড়েছে ৪০%
– পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেড়েছে ৩০%
করোনা মহামারী, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও সর্বশেষ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়েও। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকার নির্ধারিত ৫৩ ধরনের ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চিকিৎসা সেবার দাম। বিশেষ করে গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে মানুষকে আগের চেয়ে বেশি মূল্যে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
দেশের স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন খাতের ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন থেকে ছয় মাসে ব্যক্তি খাতে চিকিৎসায় ব্যয় বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। এ অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে পাঁচ খাতে। এগুলো হলো বিভাগীয় শহরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের থাকা-খাওয়া, গণপরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধে। এর সঙ্গে চিকিৎসার আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যয়ের হিসাব ধরা হয়নি।
চিকিৎসায় ব্যক্তির ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. এনামুল হক। তবে তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো গবেষণা বা জরিপ নেই বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যেতে পারে চিকিৎসায় ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো আমরা কোনো স্টাডি করিনি। স্টাডি করলে নির্দিষ্টভাবে বলা যেত কী পরিমাণ ব্যয় বেড়েছে।
তবে ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় লাঘবে সরকারের তাৎক্ষণিক উদ্যোগের কথা জানাতে পারেননি এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যয় কমানোর জন্য সরকারের যে পদক্ষেপ আছে, আমরা সেগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তবে এসব দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা ব্যয় কমানোর কোনো উদ্যোগের কথা জানা নেই। ’
গত ২২ জুলাই অবসরে যাওয়া স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের সাবেক মহাপরিচালক ড. শাহাদত হোসেন মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জ্বালানির সঙ্গে সবকিছু সম্পর্কিত। সবকিছুতে এর প্রভাব পড়বে। ওষুধের দামও বেড়েছে। চিকিৎসার সঙ্গে যাতায়াত, খাবার, ওষুধ সবকিছু সম্পর্কিত। ফলে ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। ’
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনার পর থেকেই অর্থাৎ ২০২১ সাল থেকেই জিনিসপত্রের দাম বাড়তির দিকে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেই দাম আরও বেড়েছে। ৫৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম বেড়েছে। চিকিৎসাসংক্রান্ত অন্যান্য জিনিসের দামও বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু বেড়ে গেছে। ’ তিনি বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবায় “আউট অব পকেট” বা ব্যক্তির পকেট থেকে ব্যয় বেশি। সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের হিসাবে, ২০২১ সালে এ ব্যয় ছিল ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ। সেটাও আন্ডার এস্টিমেটেড ছিল। ওটা সঠিকভাবে করলে ৮০ শতাংশও হয়ে যেতে পারে। ’
জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কিছুদিন আগে সরকার ৫৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনিতেই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসায়ও ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া রোগীকে হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে আনা-নেওয়ার যাতায়াত ব্যয় বেড়েছে। আগে যেভাবে সাধারণ মানুষ ডাক্তার দেখাত, এখন ডাক্তার দেখানো কমে গেছে। মানুষ এখন একদম ঠেকায় না পড়লে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে না, হাসপাতালমুখী কম হচ্ছে। ’
অবশ্য বেসরকারি খাতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অন্যান্য খাতে যে দাম বেড়েছে, আমাদের চিকিৎসায় মূল্য একই রকম আছে। চিকিৎসায় কোনো মূল্যবৃদ্ধি পায়নি। সামনে বাড়ানোর কোনো প্রস্তাবও নেই। ’
থাকা-খাওয়ায় বেড়েছে ৬৪%: মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) কলেরা হাসপাতালে গত সপ্তাহে কথা হয় টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. ইউসুফের সঙ্গে। এ হাসপাতালে ভর্তি আছে তার শিশুসন্তান সুমাইয়া। ইউসুফ দেশ রূপান্তরকে জানান, রাতে হাসপাতালে থাকা যায় না। শিশুর সঙ্গে তার মা থাকেন। তিনি থাকেন মহাখালীর একটি হোটেলে। এখানে চিকিৎসায় কোনো খরচ নেই। তার খরচ শুধু হোটেলে থাকার এবং স্ত্রী ও তার তিন বেলা খাওয়ার। এর আগেও গত জুনে আরেকবার এ হাসপাতালে এসেছিলেন তারা তাদের আরেক কিশোর সন্তান সোলায়মানকে নিয়ে।
ইউসুফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন মহাখালীর যে আবাসিক হোটেলে তিনি থাকেন, সেখানে প্রতিদিন ভাড়া ৬০০ টাকা। তার একার তিন বেলা খেতে ব্যয় হয় সর্বনিম্ন ৪৬০ টাকা। এর মধ্যে দুই প্লেট ভাত ৩০ টাকা করে দুই বেলা ৬০ টাকা ও দুই বেলা মাছ-তরকারি, সবজি ও ডালসহ ৩০০ টাকা ও সকালের নাশতা ১০০ টাকা। এ ছাড়া চাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক হাতখরচে ব্যয় হচ্ছে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ এক দিনে ইউসুফের ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ২১০ টাকা।
এর আগে গত জুনে ঠিক এসব খাতেই দৈনিক ইউসুফের ব্যয় হতো ৭৪০ টাকা করে। এর মধ্যে আবাসিক হোটেলে লাগত ৪০০ টাকা, তিন বেলা নাশতাসহ খাওয়ায় ব্যয় হতো ২৬০ ও চাসহ হাতখরচ লাগত ৮০ টাকা।
ইউসুফের গত জুন ও এ মাসের ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন মাসের ব্যবধানে তার একার ব্যয় বেড়েছে ৪৭০ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৬৩ দশমিক ৫১ বা ৬৪ শতাংশ।
যাতায়াতে ব্যয় বেড়েছে ৪৬% : ময়মনসিংহ থেকে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে প্রতি মাসেই ডায়াবেটিস রোগের ফলোআপ চিকিৎসা নিতে আসেন আবদুল কাইয়ুম। তিনি জানান, ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া এলাকা থেকে মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে আসতে অটোরিকশায় লেগেছে ৫০ টাকা। সেখান থেকে এনা পরিবহনে মহাখালী পর্যন্ত ভাড়া লেগেছে ৩২০ টাকা। মহাখালী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় শাহবাগ বারডেম হাসপাতালে আসতে লেগেছে ৩০০ টাকা। সব মিলে ময়মনসিংহ থেকে বারডেম পর্যন্ত আসতে তার একার ব্যয় হয়েছে ৬৭০ টাকা। অথচ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে তার ঢাকায় আসতে ব্যয় হতো ৪৬০ টাকা। এর মধ্যে বাস ভাড়া লাগত ২২০, মহাখালী থেকে বারডেমে আসতে লাগত অটোরিকশায় ২০০ টাকা ও বাসা থেকে মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে আসতে লাগত রিকশায় ৪০ টাকা। মোট ব্যয় হতো ৪৬০ টাকা। সে হিসাবে আবদুল কাইয়ুমের এখন আগের চেয়ে যাতায়াতে ২১০ টাকা বেশি লাগছে, যা আগের মোট পরিবহন ব্যয়ের চেয়ে ৪৫ দশমিক ৬৫ বা ৪৬ শতাংশ বেশি।
অ্যাম্বুলেন্সে ও লাশবাহী গাড়িতে বেড়েছে ৪০% : খুলনায় ২০ বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা করেন হাফিজুর রহমান। তিনি নিজেও একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক। থাকেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে। হাফিজুর দেশ রূপান্তরকে জানান, জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ঢাকা যেতে ৩ হাজার টাকা খরচ বেড়ে গেছে। খুলনা থেকে ঢাকা যেতে ৫০ লিটার তেল লাগে। আগে তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৮০, এখন ১০৯ টাকা। আগে তেল লাগত ৪ হাজার টাকার, এখন একই পরিমাণ তেলে ব্যয় হয় ৫ হাজার ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ ৫০ লিটার তেলে ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা। পদ্মা সেতু হওয়ার আগে ফেরিতে ভাড়া লাগত ৮৫০ টাকা। এখন পদ্মা সেতুতে টোল লাগে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এখানে বেড়েছে ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া ভাঙ্গায় টোল দিতে হয় ৯০-১০০ টাকা, পদ্মা সেতুর আগে এই টাকা লাগত না।
একইভাবে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসতেও অ্যাম্বুলেন্সে ৩ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনেই থাকে তার তিনটি অ্যাম্বুলেন্স। তার হিসাবে, জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে অ্যাম্বুলেন্স খরচ ১ হাজার টাকার মতো বেড়েছে। পদ্মা সেতু ও রাস্তায় কয়েকটি জায়গায় টোলসহ এখন বরিশাল থেকে ঢাকা আসতে খরচ হয় ১২ হাজার টাকা। আগে ব্যয় হতো ৯ হাজার। সে হিসাবে তাদের অ্যাম্বুলেন্স খরচ বেড়েছে ৩ হাজার টাকা। সে হিসাবে আগের তুলনায় এখন অ্যাম্বুলেন্সে খুলনা ও বরিশাল থেকে আসতে ৩ হাজার টাকা বেশি লাগছে। আগে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া লাগত ৯-১০ হাজার টাকা। এখন লাগছে ১২-১৩ হাজার টাকা। সে হিসাবে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় রোগী আনতে আগের তুলনায় এখন ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
এমনকি লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে মরদেহ ঢাকা থেকে বরিশালে নিয়ে যেতে আগের চেয়ে ১০ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালের এক সিনিয়র টেকনোলজিস্ট। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, কিছুদিন আগে তার এক স্বজনের মরদেহ আল-মারকাজুল ইসলামীর লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর বাউফলে নিতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আগে লাগত ২০ হাজার। আল-মারকাজুল ইসলামীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু পরিচিত বলে তার কাছে থেকে তেলের দামটা নিয়েছেন। বাইরে যেকোনো লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি ৩০ হাজার টাকার কমে যেত না। সে হিসাবে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে আগের তুলনায় এখন ১০ হাজার টাকা বেশি লাগছে। অর্থাৎ এখানে ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
সে হিসাবে গত ছয় মাসে অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে রোগীর ব্যয় বেড়েছে গড়ে ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী আনতে বেড়েছে ৩০ শতাংশ ও লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে ৫০ শতাংশ।
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেড়েছে ৩০% : রাজধানীর বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি কমবেশি বাড়িয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল ও ডেন্টাল টেকনোলজিস্টরা জানিয়েছেন, ঢাকার আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় গড়ে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফি বাড়িয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর দুটি বড় ডায়াগনস্টিক সেন্টার দুই মাস আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নতুন ফি নির্ধারণ করেছে। তাতে দেখা গেছে, ২০ শতাংশের মতো ডায়াগনস্টিক ফি বেড়েছে। অন্যান্য হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার নির্দিষ্টভাবে নয়, অল্প অল্প করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি বাড়িয়েছে। যেমন চেস্ট এক্সরে পরীক্ষায় ৮০-১০০ টাকা বেড়েছে। যারা আগে ৬০০ টাকা নিত, এখন ৭০০ টাকা নিচ্ছে, যারা ৮০০ টাকা নিত, তারা ৯০০ নিচ্ছে। হার্ট এনজিওগ্রাম আগে ১৫-১৮ হাজার টাকায় করা যেত, এখন সেটা লাগে ২৫ হাজার টাকা।
টেকনোলজিস্টরা আরও জানিয়েছেন, আগে যে ডিজিটাল এক্সরে ৫০০ টাকা ছিল, সেটা এখন ৬০০ টাকা হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এভাবে ২০-৩০ শতাংশ ফি বেড়েছে।
আলট্রাসনোগ্রাম করার জন্য যে জেল দরকার, সেটার দাম ৩০ শতাংশের মতো বেড়েছে। এ জেল দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এ জন্য আলট্রাসনোগ্রামের দামও বেড়েছে।
দাঁতের চিকিৎসায় রোগীদের ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন দন্ত চিকিৎসকরা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, দাঁতের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় বেশকিছু সরঞ্জামাদি আগের চেয়ে দুই-তিনগুণ বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এক বাক্স রুট ক্যানেল সামগ্রীর দাম ছিল ১৫০, এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ৪৫০ টাকায়। চিকিৎসাসামগ্রীর দাম বেড়ে গেলে চিকিৎসা খরচও বেড়ে যায়। এ বাড়তি টাকা রোগীদেরই দিতে হয়।
ওষুধের দাম বেড়েছে ৫৪% : গত জুলাইয়ে সরকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় এমন ১৯টি জেনেরিকের ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়ায়। কিছু ওষুধের দাম বাড়ে ১০০ শতাংশেরও বেশি। কোনোটার দাম দ্বিগুণ বাড়ানো হয়। বাড়তি মূল্যের এসব ওষুধের মধ্যে কিছু ওষুধ গত জুলাইয়ের শেষের দিকেই বাজারে এসেছে। বাকি ওষুধগুলো এ সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে আসতে পারে বলে জানিয়েছে ফার্মেসিগুলো। এসব ওষুধের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গড়ে ৫৪ শতাংশ দাম বেড়েছে।
গত কয়েক দিন ওষুধের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার যেসব ওষুধের দাম বাড়িয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু ওষুধ বাজারে এসেছে। এসব ওষুধের আগের চেয়ে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো কোম্পানির ৮ টাকার এক পাতা নাপা (১০টা) এখন বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। নাপা সিরাপ ২০ টাকা ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ১৫ টাকার নাপা এক্সটেন্ড এখন হয়েছে ২০ টাকা। দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। নাপা ওয়ান ট্যাবলেটের এক পাতার দাম ছিল ১৪ টাকা, এখন ৬৪ শতাংশ দাম বেড়ে হয়েছে ২৩ টাকা।
সাময়িক ব্যবস্থায় লাভ হবে না : চিকিৎসা ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে স্বাস্থ্য খাতের খোলস বদলানোর পরামর্শ দিলেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদ্ধতির উন্নতি (সিস্টেম ইমপ্রুভ) না হলে সাময়িক ব্যবস্থা নিয়ে লাভ হবে না। স্বাস্থ্য খাতের খোলস পরিবর্তন করতে হবে। খোলসটাই দূষিত। স্বাস্থ্য খাতকে একদম ঢেলে সাজাতে হবে। আমলাতন্ত্র দিয়ে কখনো দেশ পরিবর্তন করা যায় না। কারণ তারা পরিবর্তন চায় না। তারা গতানুগতিক পন্থায় থাকতে চায়। রাজনীতিবিদরা চাইলে স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তন হবে। ’
বিএসসি ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি উত্তম কুমার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের অসাধু চক্র এবং সরকার ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা, সব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে ব্যয় বেশি বেড়েছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও বেশি বেড়েছে। সাধারণ চাকরিজীবীদের আয় বাড়েনি। নির্দিষ্ট আয় থেকে চিকিৎসার জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। সরকার যদি স্বাস্থ্য খাতে মনিটরিং বাড়ায়, তাহলে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে। এখন যে মনিটরিং হচ্ছে, সেটা পর্যাপ্ত নয়। ’