বাংলা ট্রিবিউন ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৫:৫৯:৩১
নির্ভরশীল নয়, সক্রিয় অবদানকারী—বার্ধক্য দেখতে হবে নতুন চোখে
জনমিতিক পরিবর্তনের দ্রুত ধাক্কায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রবীণ জনগোষ্ঠী বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বার্ধক্য সম্পর্কে প্রচলিত সংজ্ঞা ও নীতি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। সংস্থাটি সতর্ক করেছে—বয়স ঘিরে পুরোনো ধারণা ধরে রাখলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার ও সামগ্রিক সামাজিক কাঠামো ঝুঁকির মুখে পড়বে।
২–৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত “৯ম গ্লোবাল সিম্পোজিয়াম অন লো ফার্টিলিটি অ্যান্ড এজিং”–এ ইউএনএফপিএ এবং কোরিয়ার ডেটা ও পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় (এমওডিএস) জন্মহারের পতন ও দ্রুত বার্ধক্যের বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরেছে।
সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা জানান, নারীরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় বেশিদিন বাঁচলেও তারা অদৃশ্য ও অস্বীকৃত শ্রমের ভার বহন করেন, আয় ও পেনশনে বৈষম্যের শিকার হন এবং দীর্ঘসময় ধরে অসুস্থতা বা অক্ষমতার সঙ্গে জীবন কাটাতে বাধ্য হন।
পরিবার ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বয়স্ক মানুষ, বিশেষত নারীরা এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপেক্ষিত থাকেন বা স্টিগমার শিকার হন বলে সতর্ক করেছে ইউএনএফপিএ।
অনেক প্রবীণ আছেন-যারা বাস্তবে নির্ভরশীল। তারা আর্থিক ব্যবস্থা, স্বেচ্ছাসেবা ও সামাজিক সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
সম্মেলনে ইউএনএফপি’র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) পিও স্মিথ বলেন, “উদ্ভাবন, সংহতি ও যৌথ উদ্দেশ্য নিয়ে জনমিতিক পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে হবে। প্রত্যেকে যাতে যেকোনও বয়সে সুস্থ, মর্যাদাপূর্ণ ও পরিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে—সেই পরিবেশ তৈরি করাই লক্ষ্য।”
২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই বৈশ্বিক সিম্পোজিয়ামটি এখন বার্ধক্য ও নিম্ন জন্মহার–সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী আলোচনার শীর্ষ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের দ্রুততম বয়স্ক জনসংখ্যার দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া প্রমাণভিত্তিক ও অধিকারকেন্দ্রিক জনমিতিক নীতির বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
সম্মেলনে কোরিয়ার এমওডিএস’র মহাপরিচালক ইয়াং সুন পিল বলেন, “এটি কোনও নির্দিষ্ট একটি দেশের সমস্যা নয়। বিশ্বের সব দেশই ভিন্নগতিতে হলেও একই কাঠামোগত পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে।”
ইউএনফপিএ জানিয়েছে, কার্যকর জনমিতিক পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী ও আধুনিক ডেটা ব্যবস্থা। জাতীয় জনশুমারি ও ডেটা-সংগ্রহে সহায়তা দেওয়া সংস্থাটি তাদের নতুন গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানে জনমিতিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
নতুন যুক্ত হওয়া চতুর্থ সমন্বিত ফলাফলে বলা হয়েছে—দেশগুলোকে তাদের জনমিতিক ভবিষ্যৎ বোঝা, মানিয়ে নেওয়া এবং গড়ে তুলতে সহায়তা করা হবে, যেখানে লিঙ্গসমতা ও নারীর অধিকার হবে মূলকেন্দ্র।
দুই দিনের এই সম্মেলনে নীতিনির্ধারক, গবেষক ও আন্তর্জাতিক জনমিতি বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন— নিম্ন জন্মহার ও বার্ধক্য মোকাবিলায় যেন কোনও ধরনের জবরদস্তিমূলক বা অধিকারবিরোধী নীতি গ্রহণ না করা হয়।
সরকারি সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ দ্রুত প্রবীণ সমাজে পরিণত হচ্ছে। ২০২৫ সালে দেশের মোট সাড়ে সতের কোটি মানুষের প্রায় ৭ শতাংশ—অর্থাৎ অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ—হবে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী। ২০২৫ সালে প্রতি ১০ জনে একজন এবং ২০৫০ সালে প্রতি ৫ জনে একজন হবেন ৬০ বা তদূর্ধ্ব বয়সী।
এতে স্বাস্থ্যসেবা, পেনশন, সামাজিক নিরাপত্তা এবং বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলের প্রবীণ সহায়তা ব্যবস্থার ওপর কঠিন চাপ সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোগেন অসুস্থতা, অক্ষমতা, ও অবৈতনিক যত্নশ্রমের কারণে। দেশের ৯৫% প্রবীণ কোনও না কোনও স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগেন। যা ইউএনএফপি’র ডেটাভিত্তিক নীতি ও আন্তঃপ্রজন্ম সংহতির আহ্বানকে আরও জরুরি করে তুলেছে।

















