মানবজমিন ২৩ অক্টোবর ২০২৫ , ১২:০৯:৩৭
নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট
জাহরান মামদানি তখন ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্সের ছাত্র। এটি নিউইয়র্কের সবচেয়ে সম্মানিত পাবলিক স্কুলগুলোর একটি। স্কুলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হয়ে তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন ভোটার, সমর্থক, কর্মী। তার প্রচারণা ব্যর্থ হয়।
আংশিক কারণ ছিল এক অসম্ভব প্রতিশ্রুতি: ‘সব ছাত্রের জন্য স্থানীয় ফলের টাটকা জুস।’ পরে তিনি স্বীকার করেন, আমি এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যা বাস্তবে করা সম্ভব ছিল না। এ খবর দিয়ে অনলাইন নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে আরও বলা হয়, কিন্তু অন্য এক প্রচারণা দারুণভাবে এগোচ্ছিল। এটা তার কাছে অনেক বেশি অর্থবহ ছিল। তখন নিউইয়র্ক সিটির কোনো পাবলিক স্কুলেই ক্রিকেটকে আনুষ্ঠানিক খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দক্ষিণ এশীয় পটভূমি থেকে আসা মামদানি ও তার বন্ধুদের কাছে এটি ছিল একটি প্রিয় খেলা। তাই তারা নিজেরাই স্কুলে ক্রিকেট টিম গঠনের উদ্যোগ নেন। তারা মাঠে মাঠে ঘুরে ব্যাট, প্যাড আর সাইনআপ তালিকা জোগাড় করেন। ফেসবুকে মামদানি লেখেন, এই খেলায় খেলতে হলে ব্রাউন হওয়া বাধ্যতামূলক না। ধীরে ধীরে তারা ছাত্র ও শিক্ষক- উভয় পক্ষকেই বোঝাতে সক্ষম হন যে, এটি সত্যিকারের একটি দলীয় খেলা।
সহপাঠী অবনীত সিং বলেন, জাহরান তখন যেন নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিল। স্কুলে দেখা যেত, সে ছোটাছুটি করছে। সবাইকে বলছে, ‘আমরাই স্কুলের ক্রিকেট দল।’ আসলে দল হওয়ার আগেই তাকে দল হিসেবে অভিনয় করতে হয়েছিল।
শৈশব থেকে নেতৃত্বের শিক্ষা: ২০১০ সালে ব্রঙ্কস সায়েন্স থেকে স্নাতক হওয়ার পনেরো বছর পরও মামদানির জীবনীতে সেই ক্রিকেট দলের কথাই প্রধানভাবে উল্লেখ করা হয়। কারণ, এটি শুধু এক তরুণ আইনপ্রণেতার প্রাথমিক উদ্যোগ নয়- এটি তার সংগঠক মানসিকতারও প্রতীক। আজ তিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। জুনিয়র বছরে পৌঁছানোর পর মামদানির প্রচেষ্টায় নিউইয়র্কের স্কুল সিস্টেম ক্রিকেটকে আনুষ্ঠানিক খেলার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। মাসের পর মাস বৈঠক, পরিকল্পনা ও তদবির শেষে তাদের দল প্রথমবারের মতো শহরের অনুমোদন পায়। মামদানি পরে বলেন, এই ঘটনাই আমাকে সংগঠনের শক্তি ও বাস্তবতা পরিবর্তনের ক্ষমতা শিখিয়েছিল।
ছোট শহর থেকে বৃহৎ দিগন্তে: উগান্ডায় জন্ম নেয়া এবং ভারতীয় বুদ্ধিজীবী দম্পতির সন্তান হিসেবে মামদানির বেড়ে ওঠা নিউইয়র্কে। তবু তার শৈশবের নিউইয়র্ক ছিল ছোট। সীমিত বন্ধুবৃত্তের এক সাদা মধ্যবিত্ত দুনিয়া। ব্রঙ্কস সায়েন্সেই প্রথম তিনি বর্ণ, শ্রেণি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য সহ প্রকৃত নিউইয়র্ককে চিনতে শেখেন। সেখানে তিনি শিখেছেন কিভাবে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়, কীভাবে নিজের পরিচয়কে গ্রহণ করতে হয়, এমনকি কৌতুকে ভরা কৈশোরে নিজের ‘ব্রাউন’ পরিচয় নিয়েও গর্ব করতে হয়। তার এক ক্যাম্পেইন স্লোগান ছিল- হোয়াট ক্যান ব্রাউন ডু ফর ইউ? আর একবার স্কুলে পরে ছিলেন টুপি। তাতে লেখা- ‘উগিন্ডিয়াস ফাইনেস্ট’।
অসমতার পাঠ: ব্রঙ্কস সায়েন্স নিউইয়র্কের আটটি স্পেশালাইজড স্কুলের একটি। সেখানে ভর্তি সম্পূর্ণভাবে এক পরীক্ষার উপর নির্ভরশীল। এই ব্যবস্থাকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে। মামদানি নিজেও বলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলগুলো কতটা বিভাজিত। দীর্ঘদিন তিনি এই ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবি তুলেছিলেন, যদিও সাম্প্রতিক নির্বাচনের আগে তিনি একে ‘সংঘাতপূর্ণ ইস্যু’ বলে নরম অবস্থান নিয়েছেন।
নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ ও পুরনো স্কুলের গর্ব: আজও ব্রঙ্কস সায়েন্সের সাবেক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মামদানির উত্থান নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। কেউ গর্বিত, কেউ বিস্মিত- একই স্কুল থেকে এত বামপন্থী একজন রাজনীতিক বেরিয়েছে, তা অনেকের কাছে অবাক করার মতো। মামদানি নিজেও মজা করে তার পুরনো ব্যর্থ নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, নিউইয়র্ক পোস্ট আমার সেই ‘জুস ফর অল’ প্রচারণা নিয়ে লিখেছিল। আমি এখন শুধু বলতে পারি- ‘গো উলভারিনস!’ বছরখানেক আগে ম্যানহাটনের এক অনুষ্ঠানে তিনি দর্শকের ভিড়ে বসে থাকা তার পুরনো শিক্ষক কাগানকে চিনে ফেলেন। অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষক বলেন, ও আসলে তেমন বদলায়নি, শুধু এখন দাড়ি রেখেছে।

















