প্রবাস

যুক্তরাষ্ট্রে হেলথ ইনসুরেন্স এর মারপ্যাঁচ! কেমনে কি??

  জাহেদ আহমেদ ২৩ অক্টোবর ২০২৫ , ১১:৫৫:৪০

যুক্তরাষ্ট্রে হেলথ ইনসুরেন্স এর মারপ্যাঁচ! কেমনে কি??

আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা অনেক জটিল এবং অন্য দেশের তুলনায় একদম আলাদা। এখানে সরকার সবাইকে একসাথে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয় না। বরং প্রত্যেককে নিজের জন্য একটি স্বাস্থ্যবীমা বা হেলথ ইনস্যুরেন্স নিতে হয়। এই ইনস্যুরেন্সই নির্ধারণ করে আপনি কোন হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন, ডাক্তার দেখাতে কত টাকা দিতে হবে, আর কতটা খরচ সরকার বা বীমা কোম্পানি বহন করবে।

প্রথমেই বলা যায়, আমেরিকায় সাধারণভাবে চার ধরনের স্বাস্থ্যবীমা সবচেয়ে প্রচলিত — Medicaid, Medicare, Marketplace Insurance (যাকে অনেকে Obamacare বলেন), এবং Employer Insurance।

Medicaid মূলত কম আয়ের মানুষদের জন্য তৈরি একটি সরকারি বীমা প্রোগ্রাম। এটি ফেডারেল সরকার এবং প্রতিটি অঙ্গরাজ্য যৌথভাবে পরিচালনা করে। আপনি কোথায় থাকেন, আপনার পরিবারে কয়জন সদস্য আছে, এবং আপনার বার্ষিক আয় কত — এই সবকিছু দেখে নির্ধারণ করা হয় আপনি Medicaid পাওয়ার যোগ্য কিনা। উদাহরণ হিসেবে, মিশিগান রাজ্যে যদি কোনো একক ব্যক্তি বছরে প্রায় বাইশ হাজার ডলারের নিচে আয় করেন, তবে তিনি Medicaid-এর জন্য যোগ্য হতে পারেন। Medicaid সাধারণত হাসপাতালের চিকিৎসা, প্রেসক্রিপশন ওষুধ, ল্যাব টেস্ট, জরুরি সেবা, এমনকি চোখ ও দাঁতের চিকিৎসাও কভার করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হয়, তবে কিছু রাজ্যে সামান্য কপে বা ফি দিতে হয়। এটি তাদের জন্য একটি আশীর্বাদ যারা নতুন অভিবাসী বা নিম্ন আয়ের পরিবার।

অন্যদিকে Medicare হলো ফেডারেল সরকারের পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যবীমা ব্যবস্থা, যা ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের নাগরিকদের জন্য এবং কিছু নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। Medicare-এর প্রধান দুটি অংশ আছে — Part A এবং Part B। Part A মূলত হাসপাতাল ভর্তির খরচ, নার্সিং হোমে থাকা এবং কিছু হোম কেয়ার সেবা কভার করে। যারা অন্তত দশ বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেছেন এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি ট্যাক্স দিয়েছেন, তাদের জন্য Part A সাধারণত বিনামূল্যে। আর Part B কভার করে ডাক্তার দেখানো, আউটপেশেন্ট চিকিৎসা, ল্যাব টেস্ট ও মেডিকেল সরঞ্জাম। এটি পেতে মাসিক প্রিমিয়াম দিতে হয়। Medicare-এর আরেকটি অংশ আছে, Part D, যা প্রেসক্রিপশন ওষুধের খরচ কভার করে। যারা যুক্তরাষ্ট্রে কখনো কাজ করেননি, যেমন নতুন গ্রিন কার্ডধারী, তারাও Medicare কিনে নিতে পারেন, তবে তাদের মাসিক প্রিমিয়াম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হয়।

যাদের Medicaid বা Medicare কোনোটিই নেই এবং চাকরির মাধ্যমে ইনস্যুরেন্স পান না, তাদের জন্য আছে Marketplace Insurance, যাকে অনেকে “Obamacare” নামেও চেনেন। এটি আসলে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম — হেলথকেয়ার ডট গভ — যেখানে আপনি নিজের জন্য স্বাস্থ্যবীমা কিনতে পারেন। সরকার আপনার আয়ের ওপর ভিত্তি করে সাবসিডি বা আর্থিক সহায়তা দেয়, যাতে মাসিক প্রিমিয়াম কমে যায়। Marketplace ইনস্যুরেন্স সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে কেনা হয়, তবে সরকার এই প্রক্রিয়াটি সহজ করে দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে খরচ কমাতে সাহায্য করে। এখানে বিভিন্ন স্তরের প্ল্যান পাওয়া যায় — যেমন ব্রোঞ্জ, সিলভার, গোল্ড, প্লাটিনাম — যার মানে হলো আপনি যত বেশি প্রিমিয়াম দেবেন, তত বেশি কভারেজ পাবেন এবং নিজের পকেট থেকে খরচ কম দিতে হবে।

Employer Insurance বা চাকরির মাধ্যমে পাওয়া ইনস্যুরেন্স হলো সবচেয়ে সাধারণ এবং অনেক সময় সবচেয়ে ভালো কভারেজ পাওয়া যায় এমন বীমা। যারা কোনো কোম্পানি, ফ্যাক্টরি, বা অফিসে ফুল-টাইম কাজ করেন, তাদের নিয়োগকর্তা সাধারণত ইনস্যুরেন্স অফার করে। কোম্পানি সাধারণত প্রিমিয়ামের একটি অংশ নিজেরা দেয় এবং বাকিটা কর্মীর বেতন থেকে কেটে নেয়। এই ইনস্যুরেন্সে শুধু কর্মী নয়, তার স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানদেরও অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তবে কেউ যদি চাকরি হারান, তাহলে এই ইনস্যুরেন্সও বন্ধ হয়ে যায়। তখন COBRA নামের একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছুদিন নিজের খরচে একই ইনস্যুরেন্স চালিয়ে যাওয়া যায়, অথবা Marketplace থেকে নতুন ইনস্যুরেন্স নেওয়া যায়।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, আমেরিকায় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মানে ইনস্যুরেন্সের ওপর নির্ভর করা। আপনি যদি কম আয়ের হন, তাহলে Medicaid আপনার জন্য সেরা উপায়। যদি বয়স ৬৫ বছরের বেশি হয় বা প্রতিবন্ধী হন, তাহলে Medicare আপনাকে কভার করবে। আপনি যদি ফুল-টাইম চাকরিতে থাকেন, তাহলে আপনার কোম্পানির দেওয়া Employer Insurance-ই সবচেয়ে ভালো বিকল্প। আর যদি এর কোনোটি আপনার ক্ষেত্রে না মেলে, তাহলে Marketplace থেকে ইনস্যুরেন্স কিনতে পারেন।

তবে মনে রাখতে হবে, ইনস্যুরেন্স থাকলেই সব চিকিৎসা বিনামূল্যে হয় না। অনেক সময় ডাক্তার দেখাতে, পরীক্ষা করাতে বা হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে copay, deductible বা coinsurance দিতে হয়। কিন্তু ইনস্যুরেন্স ছাড়া একবার হাসপাতালে গেলে বিল আসতে পারে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত। তাই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলে নিজের ইনস্যুরেন্স প্ল্যান ভালোভাবে বুঝে রাখা, কার্ড সবসময় সঙ্গে রাখা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কোন হাসপাতালে যাওয়া উচিত তা আগে থেকেই জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

জাহেদ আহমেদ

https://www.facebook.com/share/p/16NoekF6UG/

 

আরও খবর