কম দামে রাশিয়ার তেল কিনে ভারতের লাভ হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি রুপি। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর কারণে নানা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সস্তায় রাশিয়ার তেল কেনা শুরু করে ভারত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এমন খবর জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। খবর: এনডিটিভি।

পড়ুনঃ রাশিয়ার তেল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন সম্ভব নয়ঃ

এবারই দ্বিতীয়বারের মতো বৈশ্বিক তেলের বাজারে দর কষাকষির মাধ্যমে ভারত অর্থ সাশ্রয় করেছে। ২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বিশ্ব স্থবির হয়ে গেলে তেলের দাম কমে যায় এবং ভারত সরকার কৌশলগতভাবে তেল মজুত করে। সেই সময়ের পর তেলের দাম বাড়লেও রিফাইনাররা ২৫ হাজার কোটি রুপি সাশ্রয়ের জন্য জাহাজে তেল সংরক্ষণ করে। বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারতে রাশিয়ার তেলের সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে যথেষ্ট সক্রিয় ভারতের ব্যবসায়ীরাও।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ কারণে অনেক দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে দূরে সরে গেলেও কৌশলী অবস্থান নেয় ভারত। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে বিশেষ ছাড়ে তেল কিনতে থাকে ভারত। কম দামে তেল আমদানি করে ভারতের লাভ হয়েছে আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি রুপি।

নিষেধাজ্ঞার কারণে মস্কোর ক্রেতারা সরে দাঁড়ালে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত। ভারত তার মোট আমদানিকৃত তেলের ১২ শতাংশ কিনছে রাশিয়ার কাছ থেকে, যা ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ছিল এক শতাংশের কম। গত জুলাইয়ে সৌদি আরবকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে রাশিয়া ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হয়ে ওঠে। তবে গত আগস্টে রিয়াদ তার অবস্থান ফিরে পায়। বর্তমানে রাশিয়া ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী।

ভারতের বাণিজ্য দপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে রাশিয়া থেকে ভারতের খনিজ তেল আমদানি আট গুণ বেড়ে ১১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের মার্চের পর রাশিয়া থেকে ভারত মোট ১২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ তেল আমদানি করেছে, গত বছর যা ছিল ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চলতি বছর জুন ও জুলাইয়ে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের তেল আমদানি করে ভারত।

তেলের দাম ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশটি আমদানি করে তেলের চাহিদার ৮৩ শতাংশ পূরণ করে। এই আমদানি ভারতের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২১-২২ অর্থবছরে তেল আমদানিতে দেশটির খরচ দ্বিগুণ হয়ে ১১৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এক সেমিনারে বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনা কৌশলের অংশ এবং অন্য অনেক দেশও একই রকম কৌশল ব্যবহার করে কিছু করছে। আরও স্পষ্ট বা সঠিক ধারণা দিতে গেলে বলতে হবে, রিফাইনাররা তেল কেনে, সরকার নয়। কিন্তু সস্তা তেল অর্থনীতির সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্যারামিটারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে খরচ কম হয়, আমদানি খরচ কমে যায় এবং ডলারের চাহিদা কমিয়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া সরকারের ভর্তুকি বিলও কমে আসায় সামাজিক কল্যাণ ও অবকাঠামোর জন্য অর্থ ব্যয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।