মর্গে পরিণত হতে পারে গাজার সব হাসপাতাল: রেডক্রস

আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা রেডক্রস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায়— হাসপাতালগুলোতে অনেক মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারেন এবং হাসপাতালগুলোই মর্গে পরিণত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) রেডক্রস আরও জানিয়েছে, গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যেসব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল রাখা হয়েছে সেগুলোও আর কয়েক ঘণ্টা পর বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

গত শনিবার ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। তাদের এ হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছেন। এত মানুষের প্রাণহানির প্রতিশোধ নিতে রোববার থেকে গাজার উপর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল। অবরোধের অংশ হিসেবে গাজায় বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস যেসব ইসরায়েলিকে বন্দি করেছে; তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় সচল করবে না।

কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালগুলোতে বিনা চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা প্রকাশ করে রেডক্রসের আঞ্চলিক পরিচালক ফাবরিজিও কার্বোনি বলেছেন, ‘গাজা যেহেতু বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, হাসপাতালগুলোও বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। এরমাধ্যমে ইনকিউবেটরে থাকা নবজাতক এবং অক্সিজেনে থাকা বৃদ্ধরা ঝুঁকিতে পড়ে গেছেন। কিডনির ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে গেছে, এক্সরে করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ ছাড়া হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।’

তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলো এখন জেনারেটরে চলছে। কিন্তু সেগুলোও কয়েক ঘণ্টা পর বন্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে গত শনিবার হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর প্রতিশোধ নিতে গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তাদের এ বোমা হামলায়ও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরায়েলিদের ছোড়া বোমায় আহত হয়ে অনেক মানুষ এখন হাসপাতালগুলোতে ভীড় জমাচ্ছেন। ফলে গাজায় এখন হাসপাতালগুলোর সামনে মানুষের লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে।

গাজার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিরুপায় হয়ে এখন শুধুমাত্র মুমুর্ষু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে তাদের।

পানি, জ্বালানি ও খাবারের জন্য ইসরায়েলের ওপর নির্ভরশীল গাজা। হামাসের গত শনিবারের হামলার জবাবে কড়া অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। এতে মানবিক সংকট আরো তীব্র হয়।

গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করার সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডাব্লিউ। সংস্থাটি বলছে, এটা যুদ্ধাপরাধ।

মার্কিন সমর্থন

মিত্র ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার রাতে হামাসের হামলাকে নিতান্ত খারাপ কাজ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম এরই মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছেছে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েল সফরের কথা রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, এই সফরের উদ্দেশ্য সংঘাতের অবসান কিংবা মধ্যস্থতার চেষ্টা করা নয়। ইসরায়েলের প্রতি সংহতি ও সমর্থনের বার্তা নিয়ে আসবেন ব্লিনকেন।

পুতিনের নিন্দা

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইসরায়েলে যা ঘটছে, তা ভয়ংকর। উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে পুতিন বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না যুক্তরাষ্ট্র কেন বিমানবাহী রণতরি আনছে।’

ইইউয়ের সতর্কতা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। নিজেকে রক্ষার অধিকার আছে ইসরায়েলের, তবে তা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইন মেনে করতে হবে।

হিজবুল্লাহর সঙ্গেও উত্তেজনা

হামাসের পাশাপাশি উত্তরে লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গেও উত্তেজনা ও মৃদু সংঘাত চলছে ইসরায়েলের। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, লেবানন থেকে ইসরায়েলি সামরিক চৌকি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে। জবাবে লেবাননের ভেতরে হিজবুল্লাহর আস্তানায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

হিজবুল্লাহ বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে তাদের তিন যোদ্ধা নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে সামরিক চৌকিতে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা, এএফপি