জাতীয়

১২৩টি সংগঠন আন্দোলন ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের নামে ১ হাজার ৬০৪টি সড়ক অবরোধ:

  প্রথম আলো ১৫ অক্টোবর ২০২৫ , ৫:৪৮:৩১

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’–এর ব্যানারে প্রেসক্লাবের সামনে সড়কে অবস্থান। ফাইল ছবি: প্রথম আলো

রাস্তা অবরোধ করা ‘বন্ধ করতে’ চায় পুলিশ

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে গত আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৬০৪টি সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে।

জনদুর্ভোগ ঠেকাতে রাস্তা অবরোধ করা বন্ধ করতে চায় পুলিশ। পুলিশ মনে করছে, তারা রাস্তা অবরোধ এবং বিভিন্ন দাবিদাওয়ার আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া ব্যাহত হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গত রোববার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় দাবিদাওয়া আদায়ে রাস্তা বন্ধ করা প্রতিরোধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে পরামর্শ আসে, দাবিদাওয়া যাতে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়, সেই আহ্বান জানানো দরকার। বিষয়টি গত সোম ও মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধফাইল ছবি: প্রথম আলো

সচিবালয়ে গত রোববার যখন কোর কমিটির বৈঠক চলছিল, তখন কাছের জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাতে এই সড়কে গাড়ি চলাচল তো ব্যাহত হয়ই, আশপাশের সড়কগুলোতেও সৃষ্টি হয় যানজট। দুপুরে সড়ক অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আটকও করা হয় কয়েকজনকে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার কোর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচনা হয়, কারও যৌক্তিক দাবি থাকলে সেটা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে উপস্থাপনের আহ্বান জানাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ করা হবে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হতে পারে। অথবা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হতে পারে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নানা দাবিদাওয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থানের একের পর এক ঘটনা ঘটছিল। একপর্যায়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ওই এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।

২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেছিলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন।’

অবশ্য জনদুর্ভোগ তৈরি করে বিক্ষোভ থামেনি। বাসসের খবর অনুযায়ী, গত ৩১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে আন্দোলন ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের নামে ১ হাজার ৬০৪টি সড়ক অবরোধ হয়েছে। এসব অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে মোট ১২৩টি সংগঠন।

এদিকে গতকালও কর্মসূচি পালন করেছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁরা তিন দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করেন। তাঁদের হাইকোর্টের সামনে আটকে দেয় পুলিশ।

ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস হোসেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কেন দাবি আদায়ে আন্দোলন হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে রোববারের কোর কমিটির বৈঠকে। এতে একটি বাহিনীর প্রধান বলেন, প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় বিভিন্ন ব্যানারে অবরোধ করে দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে। তাদের সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি রাখতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি সদস্য রাখতে হচ্ছে। এতে নির্বাচনের প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে। নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। এভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন আন্দোলন দমাতে গিয়ে তাঁদের সময় চলে যাচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা জনদুর্ভোগ ঠেকাতে রাস্তা আটকানো বন্ধ করতে চান। মনোযোগ দিতে চান নির্বাচনের প্রস্তুতিতে।

আরও খবর