প্রথম আলো ২৮ অক্টোবর ২০২৫ , ১২:০৬:৪০
আমাদের জীবনে না চাইতেও এমন মানুষ আসে, যাকে একটা সময় আমরা ভুলে যেতে চাই। জীবনে এমন ঘটনা ঘটে, যা আমাদের ভেতর থেকে ক্রমাগত পোড়ায়। আপনি কি এমন কোনো ব্যক্তি বা ঘটনা চেষ্টা করেও ভুলতে পারছেন না? কী করবেন? আসলে কোনো মানুষ বা ঘটনাকে মস্তিষ্ক থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা খুবই কঠিন। কেননা, আমাদের মস্তিষ্ক স্মৃতি ধরে রাখে। তবে স্মৃতির প্রভাব কমানো, মনোযোগ অন্যদিকে সরানো এবং আবেগের তীব্রতা হ্রাস করা সম্ভব। নিচে ছয়টি সহজ, কার্যকর এবং বাস্তবসম্মত মনস্তাত্ত্বিক উপায় দেওয়া হলো।
চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন, আপনি পৃথবীর একেবারে শেষ প্রান্তে একটা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই দরজার বাইরে ওই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে বা দরজার ওপাশে ঘটনাটি ঘটেছে। আপনি এবার কল্পনায় ওই দরজা বন্ধ করে দিন ও নিজের পৃথিবীতে মনোনিবেশ করুন।
এই কৌশল আমাদের মস্তিষ্কে এই বার্তা দেয় যে আপনার বর্তমান পৃথিবীতে ওই ব্যক্তি বা ঘটনাটি আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফলে মস্তিষ্ক ওই স্মৃতি ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দেয় না। আপনিও তাই ওই ব্যক্তি বা ঘটনা ধীরে ধীরে ভুলতে শুরু করেন।
ওই ব্যক্তি বা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত জিনিস; যেমন ছবি, ভিডিও, টেক্সট বা গান—সব ডিলিট করে দিন। সামাজিক মাধ্যমে ভুলেও তাকে স্টক করবেন না। ওই ব্যক্তির কোনো কিছুই যেন আপনার চোখের সামনে না পড়ে, সেই ব্যবস্থা করুন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে যেখানে যেখানে ঘুরতে গেছেন, আপাতত সেসব জায়গায় যাওয়ার দরকার নেই।
সাময়িক বিরতি নিন। পরে সেসব জায়গায় গিয়ে নতুন স্মৃতি তৈরি করুন, যাতে ওই স্থানের পুরোনো স্মৃতি চাপা পড়ে যায়। তার দেওয়া উপহার কাউকে দিয়ে দিন। দেখবেন, এর ফলে তাকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কম মনে পড়ছে।
যে মানুষ বা ঘটনা থেকে আপনি মুক্তি পেতে চাইছেন, তা একটা ডায়েরিতে গুছিয়ে বিস্তারিত লিখে ফেলুন। এতে আপনার মস্তিষ্ক থেকে ঘটনা বা স্মৃতিটি কাগজের পাতায় স্থানান্তরিত হলো। লেখা শেষে পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলুন, আগুনে পুড়িয়ে ফেলুন বা টয়লেটে ফ্ল্যাশ করুন।
এতে আপনি অনেকটাই হালকা হবেন। মন হালকা করতে বন্ধু, আপনজন বা পেশাদার কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারেন।
যে মানুষ বা ঘটনা থেকে আপনি মুক্তি পেতে চাইছেন, তা একটা ডায়েরিতে গুছিয়ে বিস্তারিত লিখে ফেলুন, এতে আপনার মস্তিষ্ক থেকে ঘটনা বা স্মৃতিটি কাগজের পাতায় স্থানান্তরিত হলোছবি: পেক্সেলস
আপনি কোনো ঘটনা যতই জোর করে ভোলার চেষ্টা করবেন, ততই বেশি করে আপনার মস্তিষ্কে ঘটনাটি উঠে আসবে। মস্তিষ্কও সেই স্মৃতি গুরুত্ব দিয়ে ধরে রাখবে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কের জন্য বা ঘটনার জন্য নিজেকে মোটেও দায়ী করবেন না।
‘কেন এমন হলো বা কেন ভুলতে পারছি না?’—নিজেকে এই প্রশ্ন করবেন না। এভাবে নিজেই নিজেকে চাপে রাখলে ভুলে যেতে আরও সময় লাগবে। নিজেকে একটু সময় দিন। মেডিটেশন করুন, নতুন কোনো শখে ডুব দিন বা সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করুন। নতুন রুটিন তৈরি করে নতুন কিছু শিখুন। প্রকৃতির সংস্পর্শে সময় কাটান।
আপনার যখনই ওই ব্যক্তি বা ঘটনার কথা মনে পড়বে, তখনই মনে মনে সংখ্যা গুনুন। মনে করুন, সকালে আপনার মনে পড়ল। মনে মনে বললেন, ‘এক, দুই।’
আবার বিকেলে মনে পড়ল। মনে মনে বললেন, ‘তিন, চার।’
রাতে মনে পড়ল। মনে মনে বললেন, ‘পাঁচ, ছয়।’
এভাবে ওই ব্যক্তি বা ঘটনাটি নয়, বরং শেষবার কত গুনেছিলেন, সেটি মনে রাখার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার মস্তিষ্ক ব্যক্তি বা ঘটনাটিকে ‘বোরিং’ হিসেবে ধরে নেবে আর সহজে মুছে ফেলার চেষ্টা করবে।
আপনি কোনো ঘটনা যতই জোর করে ভোলার চেষ্টা করবেন, ততই বেশি করে আপনার মস্তিষ্কে ঘটনাটি উঠে আসবেছবি: কবির হোসেন
ঘটনাটিকে নতুনভাবে দেখার চেষ্টা করুন। ‘এই ঘটনা আমাকে কী শিখিয়েছে’, ‘এই ঘটনা কীভাবে আমাকে আরও ভালো মানুষ বানাতে ভূমিকা রাখতে পারে’ এভাবে দেখলে কষ্ট কমে।
কেউ রাতারাতি কোনো কিছু ভুলে যায় না। বিশেষ করে যা কিছু আমাদের ভেতরে গভীর ক্ষত, দাগ তৈরি করে, সেসব ভোলা সত্যিই কঠিন। তবে প্রতিদিন একটু একটু করে প্রভাব কমে যায়। একটা নির্দিষ্ট সময় পার করে বুঝবেন, আর ব্যথা নেই।
ওই ব্যক্তি বা ঘটনার কোনো নেতিবাচক প্রভাবই আপনার ভেতরে নেই; বরং সেটিকে আপনি এখন একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচকভাবেই দেখতে পারছেন।
সূত্র: বেটার হেল্প ও প্যারেড ডটকম
















