ইব্রাহিম চৌধুরী : নিউইয়র্ক ২৮ জুন ২০২৫ , ১১:২৭:৪১
গ্রিন কার্ডধারীদের জন্য নতুন সতর্কবার্তা: আইন ভাঙলে ছিনিয়ে নেওয়া হতে পারে স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত গ্রিন কার্ডধারীদের (লিগ্যাল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) একটি কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। মার্কিন ইমিগ্রেশন ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি বিভাগের ভাষ্যমতে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চরমপন্থী গোষ্ঠী, সন্ত্রাসবাদ বা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে তার গ্রিন কার্ড বাতিল হতে পারে। শুধু তাই নয়, তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারও করা হতে পারে।
প্রশাসনের ব্যাখ্যায়, চরমপন্থা বলতে বোঝানো হয়েছে এমন যেকোনো দল বা সংগঠন, যাদের কার্যক্রম জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। কেউ যদি সেই গোষ্ঠীগুলোর কোনো কার্যক্রমে অংশ নেন, বা তাদের আর্থিক সহায়তা দেন, তথ্য শেয়ার করেন, প্রশিক্ষণ দেন, ঘর-বাড়ি দেন অথবা এমন কোনো সহায়তা করেন যা সংগঠনগুলোকে সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে—তাহলেই সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এমনকি শুধু সক্রিয় সহায়তা নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থনের পোস্ট বা উস্কানিমূলক বক্তব্যও তদন্তের আওতায় আসতে পারে। সরকার স্পষ্টভাবে বলেছে, আমেরিকান সিকিউরিটির বিরুদ্ধে এমন যেকোনো পদক্ষেপ স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে থাকার অধিকার হারাতে বাধ্য করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী যে নিরাপত্তাজনিত টানাপোড়েন চলছে, তাতে করে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে তাদের অভ্যন্তরীণ সমাজে চরমপন্থা প্রবেশ ঠেকাতে। কিছু অভিবাসী সম্প্রদায়, বিশেষ করে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতভেদে যারা নিজেদের মত প্রকাশ করে, তাদের মধ্যে কিছু ‘হাইরিস্ক ইন্ডিভিজ্যুয়াল’ চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটেই এমন সতর্কবার্তা, যেন কেউ অজ্ঞতাবশত নিজেকে বিপদে না ফেলেন।
আমেরিকায় বসবাসরত একজন অভিবাসী আইনজীবী জানান, “অনেকেই ভাবেন, তারা সরাসরি কোনো সহিংস কর্মকাণ্ডে নেই, সুতরাং নিরাপদ। কিন্তু আইনের চোখে ‘সহায়তা’ মানে শুধু অস্ত্র হাতে নেওয়া না, বরং চিন্তাধারা ছড়ানোও হতে পারে অপরাধ।”
তিনি আরও বলেন, “যেকোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করতে হলে সেটি যেন আইনের সীমার মধ্যে থাকে, তা বুঝে চলা জরুরি।”
যারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকতে চান, বা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করছেন—তাদের জন্য এই সতর্কবার্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষা, পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ, দান-খয়রাতের স্থান—সব কিছুতেই সাবধান থাকতে হবে।
যদি কখনো মনে হয়, কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি চরমপন্থার দিকে টানছে, কিংবা এমন কোনো কথোপকথনে আপনাকে যুক্ত করতে চায়—তাহলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বিভাগ, কিংবা একজন অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
গ্রিন কার্ড মানে আমেরিকায় বসবাসের অনুমতি। একটি আস্থার প্রতীক—যা রাষ্ট্র আপনাকে দিয়েছে। সেই আস্থা ভঙ্গ হলে কেবল গ্রিন কার্ড হারানোর আশঙ্কা নয়, বরং পুরো অভিবাসন জীবনটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।
এখন সময় নিজেকে সচেতন রাখার, সতর্ক থাকার, এবং মনে রাখা—আপনার ভবিষ্যৎ আপনার আচরণেই নির্ধারিত।
#USImmigration