২০ মে ২০২৫ , ১০:৫৬:৩৫
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬.২ ট্রিলিয়ন (৩৬ হাজার ২০০ বিলিয়ন) ডলার। প্রতি তিন মাসে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার করে এই ঋণ বাড়ছে।
এর মধ্যেই সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করছাড় বিল অনুমোদন করেছে। এই বিলটি ২০১৭ সালে করা ট্রাম্পের করছাড়কে আরও দীর্ঘায়িত করবে এবং জাতীয় ঋণে আরও ৫ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত করতে পারে। এর ফলে দেশটির ঋণ পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে।
গত শুক্রবার, যুক্তরাষ্ট্রের এই ঋণ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই রেটিং সংস্থা মুডিস দেশটির ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে।
মঙ্গলবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র সরকার যখন ব্যয় বেশি করে এবং রাজস্ব কম সংগ্রহ করে, তখন একটি ঘাটতি তৈরি হয়। এই ঘাটতি মেটাতেই সরকারকে ধার নিতে হয়। ধার নেওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে কংগ্রেস একটি ঋণসীমা নির্ধারণ করে। এই সীমা ছাড়িয়ে গেলে বা নতুন ঋণ নিতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগে। ১৯৬০ সাল থেকে মার্কিন কংগ্রেস অন্তত ৭৮ বার এই সীমা অতিক্রমকে অনুমোদন করেছে।
প্রশ্ন উঠেছে—যুক্তরাষ্ট্র যে এত বিপুল পরিমাণ ঋণ করেছে, সেই অর্থ দেশটির কাছে পায় কে?
এই বিষয়ে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই (২৭.২ ট্রিলিয়ন) হয়েছে দেশটির ভেতর থেকে। এর মধ্যে দেশটির সরকার ১৫.১৬ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে প্রাইভেট বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে, যেমন—পেনশন ফান্ড, সেভিংস বন্ড ইত্যাদি। ৭.৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ হয়েছে বিভিন্ন সরকারি ট্রাস্ট ও সংস্থার কাছে। আর দেশটির ফেডারেল রিজার্ভের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৪.৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় থাকা ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটের প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন ট্রেজারি বিল ধারণ করে। যার মূল্য ৩১৪ বিলিয়ন ডলার।
দেশের ভেতরের হিসেব বাদ দিলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাকি ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৯.০৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ঋণের মালিক। এর মধ্যে জাপানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ রয়েছে ১.১৩ ট্রিলিয়ন ডলার। যুক্তরাজ্য পায় ৭৭৯.৩ বিলিয়ন, চীন ৭৬৫.৪ বিলিয়ন, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ ৪৫৫.৩ বিলিয়ন এবং কানাডায় ঋণ রয়েছে ৪২৬.২ বিলিয়ন ডলারের।
চীন ও জাপান উভয়ই সময়মতো এই ঋণকে কূটনৈতিক আলোচনায় চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির প্রেক্ষিতে দেশ দুটি মার্কিন ট্রেজারিতে বিষয়টি উত্থাপন করেছে।
এ অবস্থায় বর্তমানে ঋণের বিপরীতে মার্কিন সরকারের সুদের খরচ বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর প্রভাবে দেশটির বাজেট সংকুচিত হতে পারে। সরকারের পক্ষে শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো বা সামাজিক নিরাপত্তার মতো খাতে ব্যয় কমাতে হতে পারে। একই সঙ্গে কর বাড়তে পারে। এ ছাড়া সুদের হার বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষের জন্য গৃহঋণ, গাড়ির ঋণ এবং ক্রেডিট কার্ডের খরচও বেড়ে যেতে পারে।
এই ঋণের পাহাড় মার্কিন অর্থনীতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে চাপ এবং অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, যা গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।