টিবিএস রিপোর্ট ৬ মে ২০২৫ , ৬:৫৩:৪৮
আসিফ নজরুল বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা বাতিলের কারণে ওই আইনের আওতায় হওয়া ৯৫ শতাংশ মামলা বাতিল হয়ে যাবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা বাতিল করে এবং নতুন কিছু ধারা সংযোজন করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
এর আগে সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিল করে। তারপর সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সাইবার স্পেসে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন এবং সংঘটিত অপরাধের বিচার করার জন্য এই ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে।
আজ মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অধ্যাদেশসহ মোট তিনটি অধ্যাদেশ ও অন্যান্য কয়েকটি নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পরে বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন আসিফ নজরুল। এ সময় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা বাতিলের কারণে ওই আইনের আওতায় হওয়া ৯৫ শতাংশ মামলা বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এই ৯টি ধারাতেই ৯৫ শতাংশ মামলা হয়েছে। নতুন আইনের গেজেট যেদিন প্রকাশিত হবে, সেদিনই ওইসব ধারায় হওয়া মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এছাড়া কথা বলা বা মত প্রকাশের জন্য এই আইনের অধীনে যেসব মামলা হয়, সেগুলোকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। আগে জামিনযোগ্য ছিল না।
এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে শাস্তি কমানো হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড। তবে মিথ্যা মামলার শাস্তি বাড়ানো হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশে অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবিত সাইবার অধ্যাদেশে আগের আইনের ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। এই ৯টি ধারা ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের কুখ্যাত ধারা, এসব ধারাতেই ৯৫ শতাংশ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলাগুলোও এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া উপস্থাপন করা হয়। কিছু সংশোধন শেষে এই সপ্তাহে গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, এছাড়া কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ রাখা হয়েছে, একটি হচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কন্টেন্ট প্রকাশ, হুমকি দেওয়া। আরেকটি হচ্ছে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো, যেই ঘৃণা ছড়ানোর মধ্যে দিয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া হয়। ধর্মীয় ঘৃণাকে কঠোরভাবে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল বুঝাবুঝি না হয়, কেউ কাউকে হয়রানি করতে না পারে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যদি কোনো সাইবার অপরাধ করা হয়, সেটাকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই দুটি ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে এটা আমলি আদালতে যাবে, যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন—এই মামলায় কোনও যৌক্তিকতা নাই, তাহলে প্রি ট্রায়াল স্টেজে তিনি মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ চার্জশিটের জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না। যদি দেখেন সম্পূর্ণ ভুয়া মামলা, এই মামলার কোনও ভিত্তি নাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন।