টেলিযোগাযোগ সংস্কার নীতিকে টাকার বস্তা দিয়ে প্রভাবিত করবেন না: ফয়েজ আহমদ
টেলিযোগাযোগ খাত সংস্কারে সরকার যে নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে, সেখানে টাকা দিয়ে তা প্রভাবিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানিয়েছেন, টেলিযোগাযোগ আইন নতুন করে করা হবে। এ খাতে অনেক লাইসেন্স–ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে।

আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘ইন্টারনেট সেবার সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিলে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ বলেছেন, ‘আপনারা যাঁরা ব্যবসায়ী, তাঁরা ব্যবসা করেন। আপনারা টাকার গাদা নিয়ে রাজনৈতিক নেতা বা ইনফ্লুয়েন্সারদের বা নীতিনির্ধারকদের কাছে যাবেন না। এটা ব্যবসাকে টেকসই করে না।’
আগের মতো অপকর্মের (ম্যাল প্র্যাক্টিস) মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ নীতিকে প্রভাবিত না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, টাকার বস্তা নিয়ে এসে নীতিকে প্রভাবিত করবেন না। এটা থেকে সরে না এলে নিজের ব্যবসা এবং পুরো খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ফয়েজ আহমদ জানান, টেলিযোগাযোগ আইন নতুন করে করা হবে। ইন্টারনেট যে আর বন্ধ হবে না, সেটা বিনিয়োগকারীদের দেখাতে হবে। আগামী দুই বছরে বৈশ্বিক সব সূচকে বাংলাদেশকে ৩০–এর মধ্যে আনতে হবে। এটা করতে পারলে বিনিয়োগ আসবে।
টেলিযোগাযোগ খাতের নেটওয়ার্ক টপোলজি তিনটি স্তরে নিয়ে আসা হবে এবং এতে ব্যবসার সুযোগ বাড়বে বলে জানান এই বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, অনেক লাইসেন্স তুলে ফেলা হবে। কিন্তু বিদ্যমন যারা আছে, তাদের ব্যবসার সুযোগ থাকবে। তাদের মাইলফলক অর্জন করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হবে। কেপিআই থাকবে পারফরম্যান্সের ওপর। ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীরা (আইএসপি) এখন সর্বনিম্ন ১০ এমবিপিএস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই সেবা তারা দিচ্ছে কি না এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবাদাতারা মানসম্পন্ন সেবা দিচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, দেশের ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ইন্টারনেট অনেক সস্তা। কিন্তু এই দাবিকে তিনি খারিজ করে দিয়ে বলেন, যে মানের ইন্টারনেট দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট। সে হিসেবে মান বিবেচনায় দাম অনেক বেশি।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, শুরুতে আইএলডিটিএস পলিসি তৈরি করা হয়েছিল জবাবদিহির জন্য, ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক আলাদা করার জন্য এবং অবৈধ ভিওআইপি বন্ধ করতে। ২০১০ সালে এসে দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে এই নীতিকে ওলট–পালট করা হয়। সে সময় কমিশনের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে চলে যায়। এর ফলে স্বজনপ্রীতির মধ্য দিয়ে অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসি নেটওয়ার্ক টপোলজিতে তিনটি ক্যাটাগরির কথা ভাবছে উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, একটি হলো আন্তর্জাতিক, যেখানে বিভিন্ন গেটওয়ে এক লাইসেন্সের আওতায় চলে আসবে। এরপর আছে জাতীয় পর্যায়ে ও গ্রাহক পর্যায়ের ক্যাটাগরি। এ ছাড়া এক দেশ এক রেট নিয়ে আবার কাজ হবে বলে তিনি জানান। এমদাদ উল বারী বলেন, ফিক্সড সেবার একটা লাইসেন্স থাকবে। যাঁরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তাঁরা নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আসবেন, যাতে যে কেউ এই ব্যবসায় আসতে পারেন।
বৈঠকে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আজ থেকে গ্রাহকেরা ৫ এমবিপিএসের পরিবর্তে ১০ এমবিপিএস পাবেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের জুন মাসে বিটিআরসি এক দেশ এক রেট নীতি চালু করে। যার আওতায় সারা দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের একই দামে সংযোগ দিতে হয়। এতে তিনটি প্যাকেজ ছিল— প্রথম প্যাকেজের মূল্য মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা—গতি ৫ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)। দ্বিতীয় প্যাকেজের মূল্য মাসিক ৮০০ টাকার মধ্যে—এর গতি ১০ এমবিপিএস এবং তৃতীয় প্যাকেজের গতি ২০ এমবিপিএস, দাম মাসিক ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।
বৈঠকে টিআরএনবির সভাপতি সমীর কুমার দেবের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার, রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান প্রমুখ।