আইন-আদালত

জুলাই আন্দোলনে হামলা: ৪০৩ শিক্ষার্থীকে শোকজ করল ঢাবি কর্তৃপক্ষ

  দ্য ডেইলি ষ্টার ৫ নভেম্বর ২০২৫ , ৮:৩১:১৯

ক্যাম্পাস

জুলাই আন্দোলনে হামলা: ৪০৩ শিক্ষার্থীকে শোকজ করল ঢাবি কর্তৃপক্ষ

জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সংঘটিত বেআইনি ও সহিংস ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নতুন করে আরও ২৭৫ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের সই করা এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগের ১২৮ জনসহ মোট ৪০৩ শিক্ষার্থীকে এ নোটিশ দেওয়া হলো।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনাগুলোর তদন্তে এর আগে একটি প্রাথমিক তথ্য-অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি তদন্ত শেষে ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করে এবং সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন জমা দেয়।

ঢাবির ১২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ২০২৫ সালের ১৭ মার্চের সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর ওই ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তীতে সহিংস ঘটনাগুলোর আরও গভীর তদন্তের জন্য সিন্ডিকেট পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি পরবর্তীতে মোট ৪০৩ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বেআইনি ও সহিংস ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়। এর মধ্যে আগের ১২৮ জন শিক্ষার্থীও অন্তর্ভুক্ত।

যেসব শিক্ষার্থীর ছাত্রত্বের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সনদ বাতিলেরও সুপারিশ করবে বলে জানান ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া হবে।’

অভিযুক্ত ছাত্রনেতাদের নাম, বিভাগ, পদবি, হল এবং শিক্ষাবর্ষ উল্লেখ করা হয়েছে তালিকায়। রয়েছে। তাদের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ প্রায় সব হল শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আছেন।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—স্যার এ এফ রহমান হলের রিয়াজুল ইসলাম ও মুনেম শাহরিয়ার মুন; মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আজহারুল ইসলাম মামুন; শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের কামাল উদ্দিন রানা; হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শহিদুল হক শিশির ও মোহাম্মদ হোসেন।

এছাড়া সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের তানভীর শিকদার; বিজয় একাত্তর হলের সজিবুর রহমান ও আবু ইউনুস; জগন্নাথ হলের কাজল দাস ও অতনু বর্মণ; সুর্যসেন হলের মরিয়ম জামান খান সোহান ও সিয়াম রহমান; ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের জাহিদুল ইসলাম ও শরীফ আহমেদ মুনিম; অমর একুশে হলের এনায়েত এইচ মনন ও ইমদাদুল হক সোহাগ ও ফজলুল হক মুসলিম হলের আনোয়ার হোসেন নাঈম ও আবু হাসিব মোক্তার।

ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে রয়েছেন রোকেয়া হলের সভাপতি অন্তরা দাস প্রীথা ও সাধারণ সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসেন; শামসুন্নাহার হলের খাদিজা আক্তার উর্মি ও নুসরাত রুবায়েত নীলা; শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কোহিনূর আক্তার রাখি ও সানজিনা ইয়াসমিন; বেগম সুফিয়া কামাল হলের পূজা কর্মকার ও রিমা আক্তার ডলি এবং কুয়েত মৈত্রী হলের রাজিয়া সুলতানা কথা ও জান্নাতুল হাওয়া আখি। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার নামও তালিকায় রয়েছে।

তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উক্ত শিক্ষার্থীদের কাছে লিখিত ব্যাখ্যায় জানতে চাওয়া হয়েছে— কেন তাদের স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে না।

নোটিশ প্রকাশের দিন থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের লিখিত জবাব প্রক্টর দফতরে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় একতরফাভাবে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

তথ্য অনুসন্ধানে সহিংসতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে— নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সময় আহতদের ওপর হামলা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা।

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মাঝামাঝি কিছু ছবি – সৌজন্যে দ্য ডেইলি ষ্টার

আরও খবর