ডিম-মুরগির দাম বাড়ে চাঁদাবাজিতে
সংবাদ সম্মেলনে বিপিএর দাবি

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম ২০% থেকে ৫০% শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষেরা তাদের দৈনিক আমিষ গ্রহণে কাটছাঁট শুরু করেছেন। এর ফলে জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এবার ডিম ও মুরগির দাম বৃদ্ধির জন্য পোলট্রি পরিবহন থেকে রাস্তায় রাস্তায় নামে-বেনামে চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন তথ্য দেন সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার। এ সময় তিনি চাঁদাবাজি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি বাপ্পী কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, পোলট্রি উদ্যোক্তা কাউসার আহমেদ, চুক্তিভিত্তিক খামারি ইকবাল হোসেন প্রমুখ।

সুমন হাওলাদার বলেন, করপোরেট গ্রুপের ডিম-মুরগি, পোলট্রি ফিড, মুরগির বাচ্চা পরিবহনে বিআরটিএর অনুমতি থাকলেও প্রান্তিক খামারিদের দেওয়া হয় না। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ডিম মুরগির গাড়ি ঠিকই রাস্তায় চলছে। তবে চলাচলে ট্রাফিক বিভাগ, হাইওয়ে পুলিশ, থানার চেকপোস্টসহ সারা দেশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মাসিক চাঁদা দিয়ে চলতে হয়। মাসিক চাঁদা দিয়েও গাড়িগুলো দিনের বেলা চলাচল করতে পারে না। ফলে ডিম-মুরগি পরিবহন করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এবং রাতে চলাচলে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে। এতে ডিম ও মুরগি পরিবহন খরচ বেড়ে যায় এবং ডিম মুরগির দামও বেড়ে যায়।

এর প্রতিকারে সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, ডিম ও মুরগি পরিবহন করার জন্য মুরগির খাঁচার অনুমোদন দিতে হবে। যাতে পোলট্রি খাতের পরিবহন বাধাহীনভাবে চলতে পারে।

রমজানের আগে ডিম-মুরগির দাম বাড়ার পেছনে বড় উদ্যোক্তা বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান জড়িত দাবি করে বিপিএ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, করপোরেট গ্রুপের সব ধরনের মুরগির বাচ্চা আমদানি অনুমতি থাকলেও করপোরেট সিন্ডিকেটের যোগসাজশে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রান্তিক খামারিদের মুরগির বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। প্রান্তিক খামারিদের মতামত না নিয়ে শুধু করপোরেট সিন্ডিকেটকে সুবিধা দিয়ে ২৮ থেকে ৩০ টাকা উৎপাদন খরচের মুরগির বাচ্চার দাম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিএলএস দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৪৯ থেকে ৫২ টাকা।

এ ছাড়া করপোরেট গ্রুপগুলো মুরগির বাচ্চার উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে তারা তাদের চাহিদা মতো নিজস্ব খামারে বাচ্চা তুলেছেন এবং চুক্তি খামারিদের বাচ্চা দিয়েছেন। অবশিষ্ট বাছাই করা নিম্নমানের বাচ্চাগুলো অতিরিক্ত দামে তাদের পরিবেশকের মাধ্যমে প্রান্তিক খামারিদের কাছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রয় করেন। যার খেসারত দিতে হচ্ছে ভোক্তা ও প্রান্তিক খামারিদের। করপোরেট গ্রুপগুলো মুরগির বাচ্চা এবং মুরগির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। এখন বাজারে যে পরিমাণ মুরগি আছে এগুলো বেশিরভাগ কোম্পানির নিজস্ব উৎপাদন এবং তাদের কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মুরগি। খামারিদের মুরগি বাজারে এলে ম্যাজিকের মতো দাম কমে যায়। প্রান্তিক খামারিদের ন্যায্যমূল্য দিয়ে উৎপাদনে ধরে রাখতে না পারলে কখনোই ডিম মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরবে না।