বই পড়ে কী হয়?
চারদিকে এখন বই বই গন্ধ। মাসব্যাপী বইমেলা শেষ হতে আর দিনকয়েক বাকি। পাঠকেরা বই কিনছেন, বই পড়ছেন। কিন্তু বই পড়ে আসলে কী হয়?

লেখা:লুনা রুশদী | প্রথম আলো

মেলবোর্নে রোববার সকাল। নাশতা খাওয়া শেষ। গতকাল গায়ে ফোস্কা পড়া গরম ছিল। এই শহরের অনিশ্চিত আবহাওয়ার পরম্পরা অনুযায়ী আজ মনে হয় শীতকাল সমাগত। জানালা খোলা, ব্যাকইয়ার্ডে অ্যাপ্রিকটগাছের সবুজ পাতার ওপর নরম রোদ, নিচে ঘাসের ওপর আলোছায়ার নকশি। গত বছরের বইমেলায় কেনা বইয়েরা এত দিনে আমার হাতে এসে পৌঁছাল। কফি-টেবিলের ওপরে স্তূপ করে রাখা। শেলফে তুলে রাখার আগে কয়েক দিন কাটবে রংবেরঙের মলাট দেখে, বইয়ের পাতা উল্টে আর তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে। আব্বা-আম্মা আর আমি যে যার পছন্দমতো বই হাতে নিয়ে আরাম করে বসেছি। রান্নাঘরে আমার বোন সানিয়া চা বানাচ্ছে, কাপে চামচ নাড়ার পরিচিত আনন্দময় শব্দে মনের মধ্যেও রিনঝিন বাজছে।

নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে নিতে আমি জানতে চাই ‘আচ্ছা, বই পড়ে কী হয়?’
‘বিদ্বান হয়, জ্ঞানী হয়,’ আম্মা তৎক্ষণাৎ জানায়।
‘অজ্ঞানও হয়’ আব্বা বলে।
‘সেইটা কেমন?’
হাতে হাতে চায়ের কাপ দিতে দিতে সানিয়া বলে ওঠে, ‘মোটকা বই দিয়ে মাথায় বাড়ি মারলে।’
আমি কফি–টেবিল থেকে সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা ‘মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী’ হাতে নিয়ে দেখালাম—এইটা?

‘না না, ওইটার বাড়িতে তো স্মৃতি ফেরত আসবে, ভুইলা যাওয়া কথা মনে পড়বে’, আম্মা বলে।

এই কথার সূত্র ধরে আলাপ চলে গেল ১৫০০–১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের ইংল্যান্ডে। রাজা অষ্টম হেনরি আর তারপর তাঁর মেয়ে মেরির রাজত্বকালে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ক্ষমতাবানেরা সব সময়েই চেষ্টা করেছে মানুষের চিন্তাকে সীমাবদ্ধ করে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে ফেলতে। বই যেহেতু চিন্তা ভাগাভাগির মাধ্যম, তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মতাবলম্বী বই নিষিদ্ধ হয়েছে, লেখকদের মেরে ফেলা হয়েছে, জেলে ভরা হয়েছে, দেশদ্রোহী বানানো হয়েছে অথবা দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। অষ্টম হেনরির সময় ধর্মীয় আশ্রমগুলো তছনছ করা হয়েছিল, অত্যাচারিত হয়েছে ক্যাথলিকরা আবার তাঁর কন্যা মেরির রাজত্বকালে অত্যাচারিত হয়েছে প্রোটেস্ট্যান্টরা। পুড়িয়ে মারা হয়েছে অসংখ্য মানুষকে, একই সঙ্গে ধ্বংস করা হয়েছে ভিন্নমতের অগুনতি বই এবং লাইব্রেরি। অত্যাচারিত প্রোটেস্ট্যান্টরা মেরির নাম দিয়েছিল ‘ব্লাডি মেরি’।

তারপরও এই ইতিহাস তো আমরা কোনো না কোনোভাবে জানতে পারতেছি, তাই না? সেইটা কীভাবে?

মেইনস্ট্রিম ইতিহাস লেখে বিজয়ীরা। হিটলার যদি যুদ্ধে জিতত, সে হইত নায়ক। রাস্তার মোড়ে মোড়ে তার মূর্তি, দেয়ালে ছবি দেখতাম। বলতাম মহান ফ্যাসিবাদ অথবা জাতির জনক হিটলার। ‘সত্য’ তো সরলরৈখিক না। স্তরে স্তরে থাকে। শুধু ইতিহাসের বইয়ে তারে পাওয়া যাবে না। মানুষের গল্পের মধ্যে, সাধারণের জীবনযাপনের মধ্য থেকেই মূল সত্যের আভাস মেলে।

আমার মনে পড়ল, অস্ট্রেলিয়ান লেখক কেট গ্রেনভিলের লেখা ‘আ রুম মেড অব লিভস’ (‘পাতায় বোনা ঘর’) পড়ছিলাম। গল্পটা বলা হয়েছে ঐতিহাসিক চরিত্র জন ম্যাকার্থারের স্ত্রী এলিজাবেথ ম্যাকার্থারের কল্পিত স্মৃতিকথা ঘিরে। জন ম্যাকার্থার ব্রিটিশ আর্মির লেফটেন্যান্ট হিসেবে অস্ট্রেলিয়া আসেন ১৭৮৯ সালে। এ দেশের মেরিনো উলশিল্পে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। জন সে সময়ের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কেট গ্রেনভিলের বইয়ে, জনের স্ত্রীর জবানিতে, তাঁর অত্যাচারী রূপ প্রকাশ পেয়েছে, বর্ণিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ওপরে ইউরোপীয় সেটলারদের অত্যাচারের ইতিহাস।

গবেষণার জন্য গ্রেনভিল এলিজাবেথের লেখা বেশ কিছু চিঠি পড়েছেন। এলিজাবেথ অস্ট্রেলিয়া থেকে চিঠি লিখতেন ইংল্যান্ডে তাঁর কৃষিজীবী পরিবারের কাছে। জাহাজে করে চিঠি পাঠানোর মূল্য নির্ধারিত হতো পৃষ্ঠা সংখ্যার ওপরে। এ কারণে যতটা সম্ভব ঠাঁস বুনোটে চিঠি লেখা হতো। এলিজাবেথের ক্ষেত্রেও তাই—একটা পৃষ্ঠার দুই দিক ভরে তো আছেই, মার্জিনে মার্জিনে, কোনাকুনি—যেভাবে পারা গেছে, লেখা আঁটানো হয়েছে। প্রথম দেখায় বিভ্রান্ত লাগে, যেন গোলোক ধাঁধায় ঘুরে ঘুরে পথ চিনতে হবে। গ্রেনভিল তাঁর একটা বক্তৃতায় বলেছেন—কোনো কিছুই লুকিয়ে রাখা হয়নি, সবই চোখের সামনে, শুধু ঠিক কোণ থেকে দেখতে হবে, ঠিক জায়গায় পাতা ওল্টাতে হবে। আমরা বিষয়টাকে গল্পের রূপক হিসেবেও ভাবতে পারি, যে সত্য আমাদের চোখের সামনে বিছিয়ে আছে, কিন্তু আমাদের পাঁচ ইন্দ্রীয় দিয়ে যাকে পুরোপুরি আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না, সেই সত্যকে সুসংগতভাবে হাজির করার জন্য গল্পের প্রয়োজন।

জোয়ান ডিডিয়ান একবার গল্পের অপরিহার্যতার বর্ণনা করে বলেছিলেন, ‘আমরা নিজেদের গল্প শোনাই বেঁচে থাকার জন্য।’ সেটা কী রকম? আদিম শিকারিরা তাদের পেছনে একটা ডাল ভাঙার শব্দের সঙ্গে সাথে কল্পনা করত বাঘ এসেছে। এই কল্পনা তাদের প্রাণ রক্ষা করত। মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল কাহনাম্যান মনে করেন, মানবজাতি বেঁচে-থাকার পদ্ধতি হিসেবে, দ্রুত ঘটতে থাকা জটিল ঘটনাকে অর্থবহ করে তোলার জন্যই গল্পের উদ্ভাবন করেছে।

ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জানালায় দেখি ফিজোয়াগাছের পাতার ভেতর দিয়ে বাতাস বইছে ঝিরিঝিরি—তাকে দেখা যায় না শুধু অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। সানিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, বলো তো এখন আমার কোন কবিতাটা মনে পড়ছে?

আম্মা বলে ওঠে—চিরল চিরল তেঁতুল পাতা, তেঁতুল বড় টক, তোমার সাথে প্রেম করিতে আমার বড় শখ।

আবার কিছুক্ষণ হাসলাম। মনে হলো একই দৃশ্য, একই ঘটনা বিভিন্ন মনে বিভিন্ন অভিব্যক্তির জন্ম দেয়। এ রকম ঝিরঝির বাতাসের দিনে কারও মনে আসে ‘চিরল চিরল তেঁতুল পাতা’, আবার কেউ লেখেন ‘বাতাস বইছে বেরিয়ে পড়ার বাতাস, গাছের কাছে বলো, আমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ুক, পথের কাছে বলো আমার ফিরতে অনেক রাত্রি হবে…’

বই কাকে বলে? দুই মলাটের মাঝে কিছু লেখাভর্তি পৃষ্ঠা? সে রকম তো কত আছে। হাজার হাজার ছাপা হয়, কেউ খবরও রাখে না। একটা বই, গল্প, লেখা অথবা অভিব্যক্তি আসলে সম্পর্কের মতো। সার্থক সম্পর্কগুলো আমার চিন্তাকে প্রভাবিত করবে, সূক্ষ্মভাবে হলেও আমাকে বদলে দেবে। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন বইয়ের সম্পর্ক জমে ওঠে। আবার জীবনের আলাদা ধাপগুলোতে একেক রকম বই আমাদের প্রভাবিত করে। কখনো একই লেখা ভিন্নভাবে ধরা দেয় সময়ের ব্যবধানে। যেমন ক্লাস ওয়ানে পড়েছিলাম ‘আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে, তোমার ছেলে উঠলে মা’গো রাত পোহাবে তবে…’, সে সময় যা ছিল শুধু কিছু ছন্দবদ্ধ শব্দ, এখন কী গভীর উপলব্ধি হয়ে সামনে আসে!

মনে পড়ে, সমরেশ মজুমদারের ‘উত্তরাধিকার’-‘কালবেলা’-‘কালপুরুষ’ পড়ার সময় একটার পর একটা লেকচার মিস করেছি। মনে হতো এই সামান্য লেকচারে গিয়ে কী হবে! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পূর্ব-পশ্চিম’ পড়ার সময় একবার ট্রেনে অলির জন্য এত আকুল হয়ে কাঁদছিলাম যে অপরিচিত একটা ছেলে আমাকে তার রুমাল দিয়েছিল। গ্রীষ্মের এক দীর্ঘ নির্জন দুপুরে প্রথমবারের মতো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘দুরবীন’ পড়ার স্মৃতি মনে আছে। যেন এক অন্য দুনিয়া খুলে গিয়েছিল আমার সামনে। ১৯৮৬–৮৭ সালের গ্রীষ্মে বসে আমি ১৯২৯ সালের শীতকাল অনুভব করছিলাম।

‘বাস থেকে নেমেই হকচকিয়ে গেলাম। বৃষ্টিতে ভেসে গেছে সব। রাস্তায় পানির ধারাস্রোত, লোকজন চলাচল করছে না, লাইটপোস্টের বাতি নিভে গেছে’, হুমায়ূন আহমেদের ‘শঙ্খনীল কারাগার’–এর প্রথম কয়েকটা লাইন পড়লে এখনো চমকাই। কয়েকটা সাধারণ শব্দ পাশাপাশি বসিয়ে ছোট ছোট বাক্যে কী রকম ম্যাজিক! ক্লাস ফাইভে টিফিন পিরিয়ডের পরে, সেদ্ধ ডিম, ধুলা আর গরমে খেলে আসা ঘামের গন্ধ মেশানো দুপুরের ক্লাসে, মাথার ওপর কষ্টেশিষ্টে ঘুরতে থাকা ফ্যানের আওয়াজের মধ্যে ভূগোল বইয়ের নিচে লুকিয়ে বইটা পড়তে পড়তে আমি চলে গিয়েছিলাম বৃষ্টি ধোয়া, ঘুম ঘুম মফস্বলের রাতে।

আলবেয়ার ক্যামুর ‘দ্য আউটসাইডার’ পাল্টে দিয়েছে আমার জীবনদর্শন। ‘হ্যারি পটার’ পড়ে জেনেছি ভালোবাসার চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই, জেনেছি সবচেয়ে বড় শত্রুকেও ক্ষমা করা যায়। আর নেভিল বেলবটমের জন্য ডাম্বলডোরের সেই বিখ্যাত উক্তি ‘বীরত্ব অনেক রকমের হয়, শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সাহস লাগে, বন্ধুর মুখোমুখি দাঁড়াতে গেলেও একই রকম সাহস লাগে।’

সিডনিতে এক সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঝড়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। এখানে যা খুব একটা ঘটে না, সেই দিন ঘটল। আমরা কয়েক বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলাম, ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। যখন মোমবাতির আলোয় সঞ্চয়িতা মেলে ধরে আমার বন্ধু পড়ে শোনাল, ‘আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি, সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ, তাহার গাছে গায় যে দোয়েল পাখি, তাহার গানে আমার নাচে বুক’—ঝুপ করে প্রেমে পড়লাম। যেন শতবার পড়া কবিতাটা আগে কোনো দিন পড়িনি। বই পড়ে এই রকম হয়, মানুষে মানুষে কথা হয়, নতুন অর্থ সৃষ্টি হয়।

তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, প্রেম ফুরাল, যেন জীবন থেমে গেল। একদিন স্বল্প পরিচিত সহপাঠীর ঘরে গেছি একসঙ্গরে পড়তে। এ দেশে চায়নিজ দোকানে মুড়মুড়ে করে ভাজা চিংড়ি-শুঁটকি বিক্রি হয় বয়ামে করে। ছেলেটা কথা বলতে বলতে চিংড়িভাজা খাচ্ছে বয়াম থেকে নিয়ে। হঠাৎ প্রাক্তন প্রেমিকের প্রসঙ্গ আসাতে কিছুতেই কান্না সামলানো গেল না। আমি অঝোরে কাঁদছি আর ছেলেটা হতভম্ব গম্ভীর মুখে একটা একটা করে ভাজা চিংড়ি খেয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ মনে এসেছিলেন বিনয় মজুমদার—‘মাঝে মাঝে অগোচরে বালকের ঘুমের ভিতরে, প্রস্রাব করার মতো অস্থানে বেদনা ঝরে যাবে’ আর আমি হেসে উঠেছিলাম। বই পড়ে এ রকমও হয়, বেদনার অতলে তলিয়ে গিয়েও ভু-উ-শ করে ভেসে ওঠা যায়।

কোভিডের লকডাউনের সময় আমার আম্মার ক্যানসার অপারেশনের পরে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল।

তখন কারও দেখতে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। প্রতি সন্ধ্যায় আমি আম্মাকে ফোন করতাম। আব্বা বসত আমার পাশে। ফোন স্পিকারে দিয়ে পড়ে শোনাতাম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘উজান’। সেই সময়টায় মনে হতো আমরা পাশাপাশি আছি। অথবা একসঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছি ময়মনসিংহের আনাচকানাচ। বই পড়ে এ রকমও হয়, ভালোবাসার মানুষের সান্নিধ্য অনুভব করা যায়। দমবন্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি মেলে।

রোববার রাত। চারপাশ সুনসান। আমার জানালা থেকে প্রতিবেশীর বাড়ি দেখা যায়, অন্ধকার। তার পরের বাড়িটায় এখনো আলো জ্বলছে। আকাশে একটাই তারা দেখা যাচ্ছে এখান থেকে, মিটমিট করছে, মেঘ তাকে ঢেকে দিচ্ছে। বইয়ের তাকের ওপরে লীলা মজুমদার শেখাচ্ছেন অসহায়ের অতীত যা-ই হোক, তার সহায় হতে হয়, তার ক্ষততে বোলাতে হয় আদরের আঙুল। বিভূতিভূষণ বলছেন ১৮৬০ সালে যে সাত বছরের ইংরেজ শিশু মারা গেছে ভারতে, যাকে কেউ মনে রাখেনি, তার ভাঙা কবরের ওপরে এখনো গাছেরা রাশি রাশি ফুল ঝরায়। সবাই ভুলে গেলেও বনের গাছপালা তাকে ভোলেনি। ব্রাত্য রাইসু আকাশে কালিদাসের লগে ‘মেগ’ দেখতে দেখতে প্রশ্ন করেন ‘ভালো কবিতার সমঝদার, আপনেরে আমার কী দরকার?’

আন্দালীবের ‘বৃশ্চিক সূর্যের নিচে’ আলতাফ শাহনেওয়াজের ‘কলহবিদ্যুৎ’ চমকায়। আলভী আহমেদের ‘জীবন অপেরা’ থেকে বের হয়ে রিফাত হাসানের ‘সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতির’ টানাপড়েনে শহীদুল জহিরের চটি ফট করে ছিঁড়ে যেতেই তিনি ‘উধাও’ হন আসিফ নজরুলের বইয়ের পাতায়। সন্দীপন ডায়েরী লিখলেও কুসুমকুমারী দেবী লেখেন দৈনন্দিন লিপি, ভূমিষ্ঠ হন ‘অনন্য জীবনানন্দ’। মাহবুব মোর্শেদ বলে ওঠেন ‘তোমারে চিনি না আমি।’ সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের ‘কালকেতু ও ফুল্লরা’কে দেখতে আসে রাশিদা সুলতানার ‘সাদা বিড়ালেরা’। ফয়েজ আহমেদের ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’র পাশে মেসবা আলম অর্ঘ্য লিখে রাখেন ‘তোমার সঙ্গে আক্ষরিক’। ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’–এর কাছে ক্লান্ত পায়ে ফিরে আসে মশিউল আলমের ‘বাবা’। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘সেপাই’–এর হাট ধরে চিন্ময় গুহর উন্মাদিনী ছুটে যায় চিলেকোঠায়। গ্যারি বাস–এর ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ পেয়ে শাহীন আখতারের ‘অসুখী দিন’ পেরিয়ে নিভৃতিতে এসে দাঁড়ায় সাজ্জাদ শরিফের ‘ঈশ্বর দর্শন’। আদানিয়া শিবলির ‘উই আর অল ইকুয়ালি ফার ফ্রম লাভ’ পড়ার পর বিষণ্ণ মনে ‘নর্থ এন্ড’–এ কফি খেতে যায় বর্ণালী সাহার ‘জবরখাকি’…আমার বইয়ের তাকে সাজানো রয়েছে কত রকম পৃথিবী। এক গল্পে আরেক গল্প মেশে। নতুন গল্প পুরোনোকে মুছে দেয়। কীভাবে আমরা না শুনতে পাওয়া সত্যকে শুনব? কোন গল্পটায় এবার মন দেব?