প্রবাস

তিন শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র

  বাংলা ট্রিবিউন ২৯ মার্চ ২০২৫ , ১১:১৮:৪২

তিন শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একথা জানিয়েছেন।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীদের দমনে ট্রাম্প প্রশাসন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে ভিসা বাতিলের বিষয়টিও রয়েছে। শুক্রবার (২৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীদের দমনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমেরিকা কমপক্ষে ৩০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

গায়ানা সফরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “হয়তো এই মুহূর্তে ৩০০ জনেরও বেশি। আমরা প্রতিদিনই এটা করছি, যখনই আমি এই পাগলদের কোনও একজনকে পাই (ভিসা বাতিল করে দিই)।”

মূলত মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েল-বিরোধী বলে বিবেচিত বক্তৃতা দেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কতজন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে রুবিও এসব কথা বলেন। টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া একজন তুর্কি শিক্ষার্থীকে অভিবাসন কর্মকর্তারা আটক করার পর মার্কিন পররষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ এই মন্তব্য করা হয়েছে। এমনকি ওই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পক্ষেই রয়েছেন রুবিও।

বিবিসি বলছে, ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনের বাইরে মুখোশধারী ও সাদা পোশাকের অফিসাররা রুমেসা ওজতুর্ক নামের ওই ছাত্রীকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে এবং এরপর অনলাইনে ক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে।

ওজতুর্ক মূলত একজন ফুলব্রাইট স্কলার যিনি এফ-১ ছাত্র ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আছেন এবং টাফ্টসে শিশু অধ্যয়ন ও মানব উন্নয়নের একটি ডক্টরেট প্রোগ্রামে যুক্ত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রুবিওকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেন ওই তুর্কি শিক্ষার্থীর ছাত্রের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

জবাবে রুবিও বলেন, “এর কারণ এখানেই: আমি সর্বত্র এটি বলেছি এবং আমি আবারও বলব। যদি আপনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদন করেন এবং বলেন— আপনি কেবল পড়াশোনা করতে আসছেন না, বরং বিশ্ববিদ্যালয় ভাঙচুর, শিক্ষার্থীদের হয়রানি, ভবন দখল এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আন্দোলনে অংশ নিতে আসছেন, তাহলে আমরা আপনাকে সেই ভিসা দিচ্ছি না।”

অবশ্য এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে— ওজতুর্কের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হয়েছে কিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও ৩০ বছর বয়সী এই তরুণীর বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগের কথা উল্লেখ করেননি। তিনি ইতোপূর্বে ফিলিস্তিনি-পন্থি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছেন।

এছাড়া টাফ্টসের এই ছাত্রী গত বছর ছাত্র পত্রিকায় একটি মতামত লেখার সহ-লেখক ছিলেন। সেই লেখায় তার বিশ্ববিদ্যালয়কে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কিত কোম্পানিগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এবং “ফিলিস্তিনি গণহত্যা” স্বীকার করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

অনলাইন লাইক দিলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত শিক্ষার্থীরা!

যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা শত শত বিদেশি শিক্ষার্থীকে হঠাৎ করে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে পাঠানো ইমেইলে জানানো হয়েছে, তাঁদের স্টুডেন্ট ভিসা (এফ-১) বাতিল করা হয়েছে। মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট শেয়ার করেছেন কিংবা তাতে লাইক দিয়েছেন।

এই কঠোর ব্যবস্থা শুধু সরাসরি বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বরং যাঁরা কোনোভাবে এসব কর্মকাণ্ড সমর্থন করেছেন, এমনকি অনলাইনে লাইক দিয়েছেন, তাঁদেরও এই শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।

এদের মধ্যে কিছু ভারতীয় শিক্ষার্থীও রয়েছেন, বলে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে, যার মধ্যে ৩ লাখ ৩১ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তাঁরা প্রতিদিন এই ধরনের ভিসা বাতিল করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে তিন শতাধিক ভিসা বাতিল করেছি এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

আইন ভেঙে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ পাবে না। ’

‘ক্যাচ অ্যান্ড রিভোক’ অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারি

‘ক্যাচ অ্যান্ড রিভোক’ নামে একটি এআই-চালিত অ্যাপ চালু করেছে রুবিওর কার্যালয়। অ্যাপটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহভাজনদের ভিসা বাতিলের সুপারিশ করে।

মার্কো রুবিও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া জন্মগত অধিকার নয়।

এটি একটি সুযোগ এবং কেউ নিয়ম ভাঙলে তাঁকে চলে যেতে হবে। ’

ইমেইলে কী বলা হয়েছে?

তাঁদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং তাঁরা আর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি পাবেন না।

যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে, অন্যথায় তাঁদের আটক বা জোরপূর্বক বহিষ্কার করা হতে পারে।

ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইলে নতুন করে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

অনেকেই মনে করছেন, এতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও খবর