ব্যারিস্টার জাইমা কি বিএনপির শেষ ভরসা?

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পরিবারের বাইরে আসতে পারছে না বিএনপি। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপির রাজনীতি, এর নেতৃত্ব তারই পরিবারকেন্দ্রিক আবর্তিত হচ্ছে। আগামীতেও নেতৃত্ব জিয়া পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বিকল্প নেই বিএনপির সামনে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের স্থায়ী কমিটির প্রথম সদস্য। দলের অন্যতম নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তিনি। তিনি মূল নেতৃত্বে আসতে পারেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হিসেবে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সুধী সমাজেও তার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু দলের নেতৃত্বে প্রত্যাশিতভাবে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রবীণ এই নেতা তার পরিকল্পনামাফিক বা পরিকল্পনার অংশবিশেষ অনুযায়ীও দল পরিচালনা করতে পারছেন না কেন? ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রয়েছে। দুটি মামলা মারাত্মক ধরনের দুর্নীতির। তিনি জেলে ছিলেন। দীর্ঘদিন যাবৎ জামিনে মুক্ত জীবনযাপন করছেন। দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম সীমিতভাবে পরিচালনা করে আসছেন। তা-ও অবগতি, ইচ্ছার বাইরে নয়। তার সঙ্গে সরকারের মহলবিশেষের গভীর সমঝোতা রয়েছে বলেই বিএনপি মহলে কথা রয়েছে। তারেক রহমানের অবর্তমানে তারই দলের নেতৃত্বে থাকার কথা। কিন্তু তাকে রাখা হয়েছে পাঁচজনের একজন হিসেবে।
তারেক রহমানের কাছে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের চেয়ে অনেক বেশি বিশ্বস্ত সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য অর্থাৎ মহাসচিবের পদ পাওয়ার জন্য তার আকাক্সক্ষা রয়েছে প্রবলভাবে। সর্বাধিক বিশ্বস্ত হিসেবে তারেক রহমানের পছন্দের তালিকার শীর্ষে আমীর খসরুর অবস্থান। কিন্তু দলে তাকে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের বৃহত্তর অংশই তাকে মহাসচিব পদে প্রত্যাশা করেন না, মেনে নিতেও পারবেন না।

বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সবচেয়ে শান্তিকামী, সুশীল, সর্বমহলে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব হয়েও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সন্ত্রাস, নাশকতা, বোমাবাজির মামলারও আসামি করা হয়েছে। বহুবিদ প্রতিকূলতার মধ্যেও দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসার পরও মির্জা ফখরুল দলের মধ্যেই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। কখনো এই সমালোচনা মির্জা ফখরুলের জন্য যতটা না দলের জন্য তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হয়। এসব বাস্তবতায় লন্ডন থেকে সরকার উৎখাতের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানানো হলেও বাস্তব অবস্থা তা নয়। অভ্যন্তরীণভাবেই কোনো কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতার ইন্ধনে নানা কৌশলে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। লন্ডন থেকেও মির্জা ফখরুলকে নিরঙ্কুশ নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি।

আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের ঢাকা ফেরার মাধ্যমে ইরানের খোমেনির মতো নেতৃত্ব নেওয়ার চিন্তা বিএনপির কোনো কোনো মহল থেকে করা হচ্ছে। কিন্তু তা কতটুকু বাস্তবোচিত হবে, আগামীর পরিবেশ-পরিস্থিতি কতটা অনুকূল থাকবে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এ পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়নযোগ্য বিবেচিত না হলে বিকল্প চিন্তাও রয়েছে।

শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকেন্দ্রিক কর্মসূচি দেওয়া হলেও তাকে সামনে রেখে নির্বাচন করার চিন্তা বিএনপির নেতাদের মধ্যে নেই। আইনগত বাস্তবতায় তা সম্ভবও নয়। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে দলের নেতৃত্বে আনার চিন্তা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কোনো কোনো নেতার মধ্যে ছিল। পারিবারিকভাবে সম্মতি আদায়ের চেষ্টাও করা হচ্ছিল। এ পর্যায়ে সরকারের দিক থেকে দুর্নীতির মামলা নতুন করে আনা হয়। একটি মামলায় ইতিপূর্বে তাকে দণ্ডিত করা হয়। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, পলাতক আসামি হিসেবে তারেক ও জোবাইদার বিচার হতে বাধা নেই। আইনের বিধান অনুযায়ী সশরীরে উপস্থিত হয়ে জামিন চাইতে হবে। কিন্তু পলাতক থেকে তারা আইনগত সুবিধা পাচ্ছেন না।
বিএনপির সামনে এখন একমাত্র ভরসা তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমান। তিনি সবে ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করেছেন। রাজনীতি ও আইন নিয়ে তার আগ্রহ রয়েছে প্রচুর। সে কারণে দলের চরম আপৎকালীন সময়ে তাকে নেতৃত্বে আনার চিন্তা বিএনপির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মহলে কার্যকরভাবেই রয়েছে। তাকে আটকে রাখার জন্য কোনো মামলা সরকারের নেই। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে শহীদ জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া-কেন্দ্রিক কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটলে একটা ইতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতেও পারে। কোনো কারণে ব্যারিস্টার জাইমাকে এখনই রাজনৈতিক ময়দানে অবতীর্ণ করা সম্ভব যদি না-ও হয়, বিকল্প পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে। তবে তাতে যে ঝুঁকি রয়েছে, শেষ অবধি তা সামাল দেওয়া যাবে কি না, সে চিন্তাও করা হচ্ছে। সূত্রঃ ঠিকানা অনলাইন