জাহান হাসান ২১ মার্চ ২০২৫ , ৪:১০:০৪
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৪০০-এর অধিক রাজনৈতিক নেতা আর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন না, বরং তারা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।
নতুন খসড়া আইন অনুসারে, কেবল তারাই মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন যারা রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। অন্যদের ‘সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এতে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের পরিচয় পরিবর্তিত হবে, যেমন:
এর ফলে প্রায় ১০,০০০ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় বদলে যাবে।
এই পরিবর্তনকে কেউ দেখছেন ইতিহাসের বিকৃতি হিসেবে, আবার কেউ মনে করছেন এটি মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের স্বচ্ছতা আনবে।
ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালও বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য রাজনীতিবিদদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা উচিত নয়।
অন্যদিকে, সরকারের যুক্তি হলো, আসল মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্যই এই পরিবর্তন প্রয়োজন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল শুধু একটি সামরিক লড়াই নয়, বরং এটি ছিল একটি রাজনৈতিক সংগ্রামও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি মুক্তিযোদ্ধা না হন, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ভিত্তি কোথায় দাঁড়াবে? যারা মুজিবনগর সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধকে পরিচালিত করেছেন, তারা কি কেবল ‘সহযোগী’ ছিলেন? এই প্রশ্নগুলো জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, এই পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আরও নির্ভুল হতে পারে। তবে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিভক্ত করা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিতর্ক তৈরি হতে পারে।
মুক্তিযোদ্ধাদের পুনঃশ্রেণীবিন্যাস নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসের গভীরে গিয়ে প্রশ্ন তুলছে: মুক্তিযুদ্ধ কেবল রণাঙ্গনের যুদ্ধ ছিল, নাকি এটি সামগ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগ্রামের প্রতিফলন? মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও ইতিহাস রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো হঠাৎ পরিবর্তন যেন জাতির ঐক্যকে বিভক্ত না করে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।