২৭ মার্চ ২০২৫ , ৩:৪৮:১১
মাস শেষ না হতেই চলতি মার্চে ২৭৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আয় এসেছে। একক মাসে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আগে কখনো আসেনি বাংলাদেশে। এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসীদের ২৬৪ কোটি ডলার এসেছিল, ওটাই ছিল একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। তার আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলারের রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল। ওদিকে রেমিট্যান্সের জোয়ারে রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থ পাচার প্রতিরোধে বর্তমান সরকার বেশ সক্রিয়। পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ১১টি যৌথ বিশেষ টিম কাজ করছে। রেমিট্যান্স চাঙ্গা হওয়ার পেছনে এসব উদ্যোগের ভূমিকা রয়েছে। পাশাপাশি রিজার্ভ বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত ২৪শে মার্চ পর্যন্ত দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। বাকি সাত দিন এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারের উপরে মাইলফলক রেমিট্যান্স আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থ পাচারে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফলে হুন্ডি সহ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো কমে গেছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে। এ ছাড়া পবিত্র রমজান মাস চলছে। আসছে খুশির ঈদ। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়ছে বিভিন্ন কেনাকাটা। তাই পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচের কথা মাথায় রেখে বেশি বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যার কারণে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাচ্ছে বাংলাদেশ।
চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৪শে মার্চ পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ১২৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৭.৭০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৬৬২ কোটি ডলার।
এ ছাড়া চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে বৈধ পথে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)। দৈনিক গড়ে এসেছিল ৯ কোটি ডলার বা এক হাজার ১১০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবং আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর টানা ৭ মাস দুই বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।
এদিকে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ফের ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে ডলারের দর বেশ কয়েক মাস যাবৎ ১২২ টাকায় স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।গত মঙ্গলবার দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০.০৯ বিলিয়ন ডলারে। এর আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে গত ৯ই মার্চ ১৯.৭০ বিলিয়ন ডলারে নামে। পরিশোধের আগে রিজার্ভ উঠেছিল ২১.৪০ বিলিয়ন ডলারে। সরকার পতনের আগে প্রতি মাসে গড়ে ৯০০ মিলিয়ন রিজার্ভ কমছিল। ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। গত জুলাই শেষে তা কমে ২০.৪৯ বিলিয়ন ডলারে নামে। এর বড় কারণ ছিল, আমদানি দায় পরিশোধের জন্য রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ডলার বিক্রি করছে না। বরং আগের ৩৩০ কোটি ডলার বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধে বর্তমান সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আবার ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠিয়ে প্রণোদনা সহ এখন যে পরিমাণ টাকা পাওয়া যাচ্ছে অন্যদিকে রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। ফলে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। রিজার্ভও স্থিতিশীল হয়ে এসেছে।গত সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ আয়োজিত উন্নয়ন সংলাপ ও ইফতার মাহফিলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রপ্তানি বাড়লেও ঋণ পরিশোধের কারণে রিজার্ভ আশানুরূপ বাড়ছে না। তবে ধীরে ধীরে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।