৬ মার্চ ২০২৫ , ৮:৩১:৫৯
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ বছর আট বিশিষ্টজনকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে সরকার। এবার মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য মরণোত্তর পুরস্কার পাচ্ছেন পপসম্রাট, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খান। আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অসাধারণ প্রতিভাধর আজম খান ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ক্লাস নাইনে পড়াকালেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন পাকিস্তানি শাসকরা বিভিন্নভাবে দেশের মানুষকে অনেক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। তিনি ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে গণসংগীতের চর্চা করতেন। বন্ধুদের সঙ্গে এই শিল্পীগোষ্ঠীতে সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন আজম খান।
ধীরে ধীরে মানুষের প্রশংসা পাওয়ার পর এই শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়া শুরু করেন। তাদের সাধারণ মানুষের জীবনের অভাব ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরা হতো গানে গানে। প্রতিবাদী গান গাওয়ার জন্য পুলিশের লাঠির বাড়িও খেয়েছেন আজম খান। গণ–আন্দোলনের সময়গুলোতেও গান করে গেছেন আজম খান। শুধু তাই নয়, তিনি এ ঘরানার গান গেয়ে ‘পপসম্রাট’ উপাধি পেয়েছিলেন।
আজম খানের গাওয়া অনেক জনপ্রিয় গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। গানগুলোর মধ্যে রয়েছে—‘এত সুন্দর দুনিয়ায়’, ‘অভিমানী’, ‘অনামিকা’, ‘পাপড়ি’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘আমি যারে চাইরে’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘ও চাঁদ সুন্দর’, ‘বাধা দিয়ো না’, ‘ও রে সালেকা ও রে মালেকা’ও ‘জীবনে কিছু পাব না রে’।
পপ গান গেয়ে এদেশের সাধারণ মানুষের মন জয় করেছিলেন আজম খান। দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন মারা যান এই কৃতী সন্তান।
আজম খান ছাড়া আরও যে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পাচ্ছেন তারা হলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী, কবি আল মাহমুদ, ভাস্কর নভেরা আহমেদ, বিজ্ঞানী অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম, লেখক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্যাতনে নিহত বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ।
স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে প্রতি বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে এই পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র প্রদান হয়।