আন্তর্জাতিক

‘না, ধন্যবাদ।’

  ২৯ মার্চ ২০২৫ , ১২:৫৯:৩৭

গ্রিনল্যান্ডে স্বাগতহীন ভ্যান্স দম্পতি, বাড়ি বাড়ি ঘুরেও সমর্থন পেলেন না মার্কিন কর্মকর্তারা

গ্রিনল্যান্ডবাসীর প্রতিক্রিয়া ছিল প্রায় একরকম: ‘না, ধন্যবাদ।’

ডেনিশ সম্প্রচারমাধ্যম টিভি টু-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ডেনমার্ক-শাসিত গ্রিনল্যান্ডে বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্থানীয়দের খুঁজছিলেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড লেডি উষা ভ্যান্সের সফরকে সমর্থন জানাবে। তবে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, কারণ কেউই আগ্রহ প্রকাশ করেননি।

গ্রিনল্যান্ডবাসীর প্রতিক্রিয়া ছিল প্রায় একরকম: ‘না, ধন্যবাদ।’

শুধু সাধারণ জনগণই নয়, রাজধানী নুকের পর্যটন সংস্থা টুপিলাক ট্রাভেল প্রথমে সফর আয়োজনে সম্মত হলেও শেষ মুহূর্তে সরে আসে।

ফেসবুকে এক পোস্টে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ‘আমরা মার্কিন কনস্যুলেটের অনুরোধে সফর আয়োজনের কথা বলেছিলাম, কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদলাই। সফরের অন্তর্নিহিত এজেন্ডাকে আমরা সমর্থন করি না এবং এই প্রচারণার অংশ হতে চাই না। সুতরাং, না ধন্যবাদ। গ্রিনল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ডবাসীর।’

এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি স্ত্রী উষা ভ্যান্সের সফর সঙ্গী হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘উষার গ্রিনল্যান্ড সফর নিয়ে এতটাই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে যে, আমি ভেবেছি, কেন সে একা এত মজা করবে? তাই আমি ওর সঙ্গে যাচ্ছি।’

তবে সফরের পরিকল্পনায় টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিদলের গ্রিনল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ‘কুকুরের-স্লেজ’ প্রতিযোগিতা পরিদর্শনের কথা থাকলেও সেটি বাতিল করা হয়েছে। আপাতত তাদের একমাত্র গন্তব্য পিটুফিকের মার্কিন স্পেস ফোর্স ঘাঁটি।

এই সফর নিয়ে শুধু গ্রিনল্যান্ডবাসী নয়, ক্ষুব্ধ ডেনিশ সরকারও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের ওপর এই চাপ অগ্রহণযোগ্য। আমরা এই চাপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড সরকার যখন স্পষ্টভাবে সফর প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিনিধিরা একে ব্যক্তিগত সফর বলে দাবি করতে পারে? এটি যে গ্রিনল্যান্ডের প্রয়োজন বা ইচ্ছার প্রতিফলন নয়, তা স্পষ্ট।’

বিশ্লেষকদের মতে, এ সফর নিয়ে বিতর্কের পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড-সংক্রান্ত আগ্রহও ভূমিকা রাখছে। তিনি বহুবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডকে অধীনে আনার পরিকল্পনা করছে এবং প্রয়োজনে সামরিক শক্তিও ব্যবহার করতে পারে।

উত্তর মেরুর বরফ গলে যাওয়ায় নতুন বাণিজ্য পথ তৈরি হচ্ছে, যা এশিয়া-ইউরোপ ও এশিয়া-আমেরিকার মধ্যে পণ্য পরিবহণের দূরত্ব প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেবে। এছাড়া, গ্রিনল্যান্ডের বিপুল খনিজ সম্পদ ও জ্বালানি মজুদ যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আর্কটিক অঞ্চলে ১৩ শতাংশ তেল ও ৩০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ অনাবিষ্কৃত রয়েছে।

সব মিলিয়ে, গ্রিনল্যান্ডের বিরোধিতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ কমছে না। তবে ‘গ্রিনল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ডবাসীর’—এই বার্তাও আরও জোরালো হচ্ছে।

আরও খবর