প্রবাসীরা দেশে আট শতাংশ সুদে গৃহঋণ পাচ্ছেন

সাপ্তাহিক ঠিকানার সাথে সাক্ষাৎকারে সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান

নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : সোনালী ব্যাংকের সিইও এবং ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেছেন, প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে সোনালী ব্যাংকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা নিতে পারবেন। বিডার অনুমোদন থাকলে আমরা ব্যাংক হিসাবসহ এ-সংক্রান্ত সবকিছু এক জায়গা থেকেই করে দিতে পারি। আমরা প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দেশে বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় ঠিকানার কার্যালয়ে ঠিকানাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সোনালী এক্সচেঞ্জের সিইও দেবশ্রী মিত্র।
সোনালী ব্যাংকের সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। নয় দিনের সফরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ২৯ জুন বুধবার তার বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার শিডিউল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন। সোনালী এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দেখেন এবং কিছু দিকনির্দেশনা দেন। পাশাপাশি তিনি অফিসের কিছু আনুষ্ঠানিক কাজে এখানে এসেছেন। নিয়ম হচ্ছে, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কোনো মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত হলে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু কমপ্লায়েন্স ফর্মালিটিস করতে হয়। সেসব আনুষ্ঠানিকতা করার জন্যই তিনি আসেন। সোনালী ব্যাংকের সোনালী এক্সচেঞ্জের ১০টি শাখা রয়েছে। এসব শাখার জন্য সোনালী ব্যাংকের এমডিকে পরিচালক হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়। আতাউর রহমান প্রধান বলেন, মূলত সব শাখার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়া এবং অফিসের কিছু কাজের জন্য তিনি এখানে এসেছেন।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সোনালী ব্যাংক ও সোনালী এক্সচেঞ্জের সেবার পরিসর আরো বাড়াতে। প্রবাসীদের জন্য কোনো সুখবর আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য সব সময়ই সুখবর থাকে। আমি এর আগে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলাম। তখনো চেষ্টা করেছি প্রবাসীদের জন্য কাজ করতে, এখনো করছি। প্রবাসীদের অনেকেরই অনেক সময় অভিযোগ থাকে, দেশে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার। আমরা চেষ্টা করছি, প্রবাসীরা দেশে যাওয়ার পর যাতে কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি না হন।

নিউইয়র্ক : কথা বলছেন সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান

আতাউর রহমান বলেন, প্রবাসীরা এখন অনেক সহজে দেশে খুব কম সময়ে অর্থ পাঠাতে পারছেন। পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে অর্থ দেশে চলে যাচ্ছে। যে হিসাবে পাঠাচ্ছেন, সেখানে জমা হয়ে যাচ্ছে। করোনাকালীন আইটি সেক্টরে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এর ফলে রেমিট্যান্স প্রেরণ আরো সহজ হয়েছে। আমরা গত অর্থবছরে ২২০০ কোটি টাকা প্রফিট করেছি। এটি অবশ্যই ইতিবাচক দিক।
তিনি আরো বলেন, যেসব প্রবাসী বাংলাদেশে গিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করতে চান, তারা গৃহঋণ নিতে চাইলে আমরা তাদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। তারা বাড়ি বানানোর জন্য আট শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারেন। দেশে সাধারণ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার ৯ শতাংশ। কিন্তু প্রবাসীদের আমরা দশমিক ৫০ থেকে এক শতাংশ কম সুদে ঋণ দিচ্ছি।
সোনালী ব্যাংকে অ্যাপ চালু করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনার সময় আমরা আইটি ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা ওই সময়ে একটি অ্যাপ চালু করেছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলেছেন। তাদেরকে ব্যাংকে আসতে হয়নি। বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠানোর জন্য সোনালী এক্সচেঞ্জের অ্যাপ রয়েছে, এর মাধ্যমে মানুষ অর্থ পাঠাতে পারছে। এগুলো সবই ঝামেলামুক্ত।

সোনালী ব্যাংকের সিইও বলেন, প্রবাসীদের জন্য আমরা সোনালী এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিচ্ছি। কোনো প্রবাসী চাইলে বিদেশে বসেই দেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন। দেশ থেকে লাভও আনতে পারবেন ডলারে। আবার যখন ভাঙাবেন, তখন সেটির প্রিন্সিপাল ফেরতও নিতে পারবেন ডলারে। এ জন্য তারা কিনতে পারেন ডলার বন্ড, ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং টাকার বন্ড। টাকার বন্ডে এখন আমরা ১২ শতাংশ পর্যন্ত লাভ দিচ্ছি। টাকার বন্ডে ১ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে লাভ দেওয়া হওয়া হবে প্রতি লাখে ১২ শতাংশ, ১৬-৩০ লাখে ১১ শতাংশ, ৩১-৫০ লাখে ১০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ৯ শতাংশ হারে লাভ দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা এতে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারেন।

নিউইয়র্ক : ঠিকানা কার্যালয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডিআতাউর রহমান প্রধান..সহ অন্যান্যরা।

সোনালী এক্সচেঞ্জ নিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এর সংখ্যা আরো বাড়াতে চাইছি। এর মধ্যে বাফেলোতে একটি আর ফ্লোরিডায় একটি হতে যাচ্ছে। দুটির প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। করোনার কারণে অনেক কাজই আমরা স্থগিত রেখেছিলাম। এখন আবার সেগুলো শুরু করেছি।
এখানে অন্যান্য এক্সচেঞ্জের চেয়ে সোনালী এক্সচেঞ্জে ডলারের বিপরীতে টাকার রেট কম কেন-এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এই প্রতিযোগিতায় যেতে চাইছি না। কারণ আমরা সরকারি ব্যাংক। আমরা যে দামে ডলার কিনি, বাংলাদেশে যে দাম থাকে সেই দামে আমাদের বিক্রি করতে হবে। সুতরাং বেশি দাম দিয়ে কেনার সুযোগ থাকে না। আমাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ডলার কিনতে হয়। এখানে বেশি দামে ডলার কেনা মানে দেশে এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে বেশি দামে সব পণ্য কিনতে হবে। আমরা মনে করি, ডলারের বাজারের রেট একই থাকা উচিত। বেশি ব্যবধান হলে ক্রেতাদের মধ্যে দোটানা তৈরি হতে পারে। তবে আমি এটি বলতে চাই, সোনালী ব্যাংকে অন্য এক্সচেঞ্জের চেয়ে কিছুটা রেট কম হলেও বিশ্বস্ততার সাথে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে অর্থ পাঠাতে পারেন। আমরা ৫১টি সার্ভিস দিয়ে থাকি। এ কারণে আমাদের সেবাও অনেক বেশি। সেবার মানও উন্নত।
তিনি আরো বলেন, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সরকার প্রণোদনা দিয়ে আসছে। সরকার রেমিট্যান্স প্রেরণ এবং এক্সপোর্ট খাতকে উৎসাহিত করছে। দেশে যাতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো হয়, সে জন্য সরকার চেষ্টা করছে।
বিদেশ থেকে দেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা বন্ডে বিনিয়োগ করতে চান, তারা যত খুশি বিনিয়োগ করতে পারবেন। এই বিনিয়োগ করার জন্য ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকতে হবে। তবে প্রবাসীদের অনেকেরই ন্যাশনাল আইডি কার্ড নেই, এ কারণে তারা বন্ড কিনতে পারেন না। আমরা চেষ্টা করছি, পাসপোর্ট দিয়েও যাতে বন্ড কেনা যায়, তার ব্যবস্থা করতে। ব্যাংকের সাথে পাসপোর্ট কানেক্ট করা যায় কি না, আমরা সেটি দেখছি। এ নিয়ে হোম মিনিস্ট্রির সাথেও কথা হয়েছে। অনেক সময় পাসপোর্টের মেয়াদ থাকে না, তখন কী হবে, সেটাও দেখা হচ্ছে।
প্রবাসীদের উদ্দেশে আতাউর রহমান বলেন, আপনারা বিদেশ থেকে কষ্টার্জিত অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠাচ্ছেন। এটি সঠিকভাবে বিনিয়োগ করা উচিত। বিনিয়োগের এখন অনেক সুযোগ। ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। এই সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। প্রবাসীরা যাতে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগ করেন, সেই দিকটি আমাদের দেখতে হবে। দেশকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রবাসীরা আরো ভূমিকা রাখতে পারেন।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী, প্রবাসীরা অতীত ও বর্তমানের মতো আগামী দিনেও সোনালী ব্যাংকের ওপর আস্থা রেখে সোনালী এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ অব্যাহত রাখবেন। আমরা সম্পূর্ণ নিরাপদে এবং শতভাগ নিশ্চয়তায় আপনাদের অর্থ পৌঁছে দেব। সবশেষে তিনি দেশে বিনিয়োগ করার জন্য প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান।

সূত্রঃ ঠিকানা অনলাইন