মানি লন্ডারিং‌য়ের ৮০ শতাংশ হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক যদি এটি বন্ধে
সহযোগিতা না করে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ একবার মানি লন্ডারিং হয়ে গেলে তা ফেরত আনা যায় না। পাচার
হওয়া অর্থফেরত আনা ও সহযোগিতার জন্য ১০ দেশের সঙ্গে এমওইউর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে- বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বি এফআইইউ) প্রকাশিত ২০২২-২৩
অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট ১৪ হাজার ১০৬টি
সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন বা এসটিআর জমা হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ
বেশি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল আট হাজার ৫৭১টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ
সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ২৮০টি।

এখন পর্যন্ত বিদেশে পাচার হওয়া কত টাকা ফেরত আনতে পেরেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস
বলেন, মানি লন্ডারিং একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম। এখানে বহু পক্ষ জড়িত থাকে, বহু দেশ জড়িত থাকে। আমাদের
দেশের আইন আর অন্য দেশের আইন এক নয়। আমরা কিছুআছি সিভিল ল’ কান্ট্রি র দেশ, কিছুআছি কমন ল’ কান্ট্রির
দেশ। এটা নিয়েও ভাববার আছে।

তিনি বলেন, একটা উদাহরণ আমাদের কাছে আছে, সিঙ্গাপুরে পাচার হওয়া ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার আমরা
ফেরত এনেছি। এটা কোকোর (আরাফাত রহমান) টাকা ছিল। আরেক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন,
বিএফআইইউর তথ্যে র ভিত্তিতে অর্থপাচারের মামলা হয়েছে ৫৯টি। এর মধ্যে দুদক মামলা করেছে ৪৭টি, সিআইডি
১০টি এবং এনবিআরের বিশেষ সেল ২টি। এগুলো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

বিএফআইইউ প্রধান বলেন, একবার যদি মানিলন্ডারিং হয়ে চলে যায়, সেটা ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন। সেটা আর ফিরে
আসে না। আমরা ২০১২ সালে এমএলএ-অ্যাক্ট করেছি। আমরা ১০টি দেশে এমএলএ করার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮০৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্টজমা
দিয়েছে ব্যাংকগুলো। তার আগের অর্থবছরে ৭ হাজার ৯৯৯টি রিপোর্টজমা দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো
রিপোর্ট জমা দেয় ১২১টি। আর এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ৯০০ রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

এদিকে দেশের বর্তমা নে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে অর্থপাচার। পাচারের কা রণেই দেশে ডলার সংকট ও আর্থিক
সংকট তৈরি হয়েছে। এমনকি উচ্চ মূল্যস্ফী তির জন্যও দায়ী করা হয় অর্থপাচারকে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে
যেসব দেশের সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয় সেই ১০ দেশের সাথে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তির (এমএলএ)
ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে সরকারকে এ বিষয়ে প্রস্তাবও দেওয়া হয়ে ছে। সরকার এটি গ্রহণ করার পর
দেশগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া দেশ হচ্ছে,
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড,
হংকং-চীন।

অর্থপাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএফআইইউর প্রধান বলেন, দেশের অর্থপাচারের সিংহভাগই হচ্ছে বিদেশি
বাণিজ্যের মাধ্যমে। অর্থাৎ আন্ডার ইনভয়েসিং আর ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থবিদেশে চলে যায়। তাই
গত অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি মনিটরিং করে যাচ্ছে। এতে অর্থপাচার অনেকটাই কমে এসেছে।