একদিকে টাকার অবমূল্যায়ন, অন্যদিকে ডলার সংকট। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে বিপিএম৬ পদ্ধতিতে করা হিসাব অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে ২০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। নিয়ন্ত্রিত আমদানির পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও এলসি খুলছে না প্রয়োজনমতো। ফলে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে শিল্পোদ্যোক্তাদের। শ্লথ হয়ে পড়েছে উৎপাদন। রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম। ঋণ পরিশোধসহ নানা খাতে ব্যয় বাড়ছে সরকারের। যদিও এর সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ছে না রাজস্ব আহরণ। নগদ অর্থের সংকটে ভুগছে ব্যাংক খাত। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রায় পুরোটা সময় মূল্যস্ফীতির হার রয়েছে ৯ শতাংশের ওপরে। সব মিলিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য নিয়ে। এমন কঠিন সময়েও ঋণ প্রতিশ্রুতি বা আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে না বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতম মিত্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলো। 

দ্বিপক্ষীয় ঋণগুলোর বিষয়ে কথা বলতে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। 

তবে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, নির্বাচনের পরে মিত্রদেশগুলোর কাছ থেকে আরো বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল হুদা চপল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সব নির্বাচনের সময়ই এক্ষেত্রে কিছুটা শ্লথ হয়ে থাকে। আশা করি নির্বাচনের পর আবার পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তখন দেশে অনেক বেশি বিনিয়োগ আসবে।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এশিয়া-প্যাসিফিকে উন্নয়ন কার্যক্রমে বড় এক বিনিয়োগকারীতে রূপ নিয়েছে এআইআইবি। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত এআইআইবির কাছ থেকে প্রায় ২৭২ কোটি ডলারের ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে গত অর্থবছর পর্যন্ত ১৪৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের কিছু বেশি পরিমাণ অর্থ ছাড় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ছাড় হয়েছে আরো ৫৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার। 

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মিত্রদেশগুলোর মধ্যে ঋণ প্রতিশ্রুতি মিলেছে শুধু জাপানের কাছ থেকে। এ চার মাসে প্রায় ১৫০ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ১০৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অন্যান্য উৎস থেকে ঋণের প্রতিশ্রুতি মিলেছে ৭৯ কোটি ১৩ লাখ ডলারের। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রধানের সাক্ষাৎ বা আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যখন অর্থায়নের চুক্তি হয়, তখনই বিদেশ থেকে প্রতিশ্রুতি আসে। কোনো দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও অর্থ বিভাগের। বিষয়টি আমার আওতাভুক্ত না হওয়ায় নতুন প্রতিশ্রুতির জন্য কোথাও যোগাযোগ করা হচ্ছে কিনা, আমার তা জানা নেই।’

ইয়াহইয়া নকিব| বণিক বার্তা অনলাইন